কক্সবাজারে বন্যায় আরো ৭ জনের মৃত্যু

কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়া উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ আরো পাঁচজনের লাশ আজ শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। টেকনাফে পাহাড়ধসে মারা গেছে মা ও মেয়ে। এ নিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে, পাহাড় ও দেয়ালধ্স এবং গাছচাপায় গত তিনদিনে ১৭ জনের মৃত্যু হলো।
urgentPhoto
এদিকে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার কিছু এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও নিচু এলাকায় বন্যার পানি আরো বাড়ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জেলার চকরিয়া, রামু, পেকুয়া ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় তিনদিন ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, চকরিয়া-মগনামা সড়কের যোগযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের একটি সেতু ধসে যাওয়ায় ওই সড়ক দিয়েও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে আজ শনিবার সকালে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পুরান পাড়া গ্রামে পাহাড়ধসে একটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই বাড়ির মালিক মনজুর আলমের স্ত্রী মাসুদা খাতুন (৪০) ও তাঁর মেয়ে শাহানা আকতার শানু (১৪)।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিন জানিয়েছেন, পাহাড়ধসের খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থল থেকে পাহাড়ের মাটি সরিয়ে দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়াসহ আটটি ইউনিয়নে বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৫০টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার বাসিন্দা। পানিতে ডুবে রয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের এরশাদ উল্লাহর নিখোঁজ মেয়ে হুমাইরা বেগম ও কামরুন নাহারের (২০) মৃতদেহ আজ উদ্ধার করা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, উপজেলার কাকারা, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী ও পৌর এলাকা থেকে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও উপজেলার নিচু এলাকার চারটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে নিখোঁজ চকরিয়ার লক্ষারচরের আনোয়ার আলীর মৃতদেহ আজ শনিবার সকালে এবং কাকারা গ্রামের নিখোঁজ নবম শ্রেণির ছাত্র কাউসাইন করিমের মৃতদেহ দুপুরে উদ্ধার হয়েছে।
এদিকে জেলার উপকূলীয় পেকুয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন চারদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফায়েত আজিজ রাজু জানান, উপজেলা সদর, শিলখালী, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি চার থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। পেকুয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে এক শিশু মারা গেছে।
কক্সবাজার সদর-রামু আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি মনে করি এই মুহূর্তে কক্সবাজারকে বিশেষভাবে দুর্গত ঘোষণা করে জরুরি অবস্থা জারি করা দরকার।’
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, জেলায় বন্যাদুর্গত লোকদের জন্য ১৪৫ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ টাকা, ৫০ বস্তা চিঁড়া বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মৃত পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে নগদ সাহায্য দেওয়া হবে।
অনুপম সাহা আরো জানান, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ১৪১টি আশ্রয় কেন্দ্রে এই পর্যন্ত ৬৫ হাজার ২০০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।