কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা বাঁধে ধস
অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সৈকত রক্ষা বাঁধের বিশাল অংশ ধসে পড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে বাঁধ রক্ষাকারী ব্লক ধসে পড়ায় এরই মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট এলাকা ভেঙে গেছে।
সৈকতের মাঝিবাড়ী ও শুঁটকিপল্লী এলাকার মাঝামাঝি পয়েন্টে এ ভাঙনের কারণে আতঙ্কিত এলাকার হাজার হাজার পরিবার, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা।
ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা-পরবর্তী জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮ নম্বর পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের খাজুরা-মাঝিবাড়ী পয়েন্ট। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তিন কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়। কিন্তু মাঝিবাড়ী ও শুঁটকিপল্লী এলাকার ভাঙন ঠেকাতে ব্লক না দেওয়ায় বাঁধে ভাঙন শুরু হয় বলে দাবি এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী জানান, সৈকত রক্ষা বাঁধের ওই পয়েন্টটি সাগরের মোহনায় হওয়ার ফলে ঢেউয়ের ঝাপটায় বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, ভাঙন রোধের জন্য সিসি ব্লক তৈরিতে নিয়ম না মানাসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্লক না ফেলায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফলে যেকোনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে গোটা বাঁধ ভেঙে এলাকার ভেতরে পানি ঢুকতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাদল পাহোলান বলেন, ‘সাগরের ভাঙনে কুয়াকাটা আদর্শ গ্রামের দুই-তৃতীয়াংশ বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মূল বাঁধ ভাঙনে ভেতরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়বে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে এই বর্ষা মৌসুমেই বিলীন হয়ে যেতে পারে ভেঙে যাওয়া বাঁধের বাকি অংশ।’
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই বাঁধ ভাঙন শুরু হলেও গত ছয় দিনে সেটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জোয়ারের তোড়ে বাঁধ রক্ষার ব্লক ভেঙে সৈকতে পড়ে যাচ্ছে, ভেঙে পড়েছে বাঁধের ওপর লাগানো গাছ। কিন্তু এখনো বাঁধ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের জায়গায় ব্লক ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কুয়াকাটার একাধিক হোটেল মালিক জানান, পর্যটনকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ সমুদ্রসৈকত। এরই মধ্যে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় তিন কিলোমিটার প্রস্থের সৈকত। এখন এই বাঁধ ভেঙে গেলে গোটা কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটার মূল সৈকত এখন নেই বললেই চলে। সাগরে জোয়ারের সময় এখন আর সৈকতে নামতে পারেন না পর্যটকরা। আর বাঁধে যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ না নিলে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমোদন হলেই সৈকত ও বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করা হবে।