‘সাড়ে ৭ মাস এক কাপড়েই, হাত-চোখ বাঁধা ছিল’
ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে অপহৃত ডা. মুহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ লক্ষ্মীপুরের বাসায় সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছেন। টানা সাত মাস ১৭ দিন তাঁকে একটি কক্ষে একটি টি-শার্ট আর প্যান্ট পরে থাকতে হয়েছে বন্দিদশায়। এ সময় তাঁর চোখ ও পেছন থেকে হাত বেঁধে রাখা হতো। খালি মেঝেয় রাতযাপন করতে হতো। এ ছাড়া খাবার, নামাজের অজু ও নামাজ পড়তে কিছু সময়ের জন্য হাতের বন্ধন খুলে দেওয়া হতো। তবে কে বা কারা, কী কারণে তাঁকে অপহরণ করেছে- সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলেননি ডা. ইকবাল।
গত বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ডা. ইকবাল লক্ষ্মীপুর হাসপাতাল সড়কের বাসায় ফেরেন। এর আগে রাত ১১টার দিকে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের নতুন গোহাটা এলাকায় কে বা কারা একটি মাইক্রোবাস থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায়। পরে তিনি একটি অটোরিকশা করে বাসায় ফেরেন।
২৮তম বিসিএস পাস করা ইকবাল মাহমুদ লক্ষ্মীপুর শহরের হাসপাতাল সড়কের মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নুরুল আলমের ছেলে। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা কর্মকর্তা।
অপহরণের পর সুস্থ অবস্থায় ইকবালকে ফিরে পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর ও ঢাকায় তিনবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। এ ছাড়া গত বছরের ২০ নভেম্বর ইকবালের বাবা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে তাঁকে উদ্ধারের দাবি জানান। ডা. ইকবাল মাহমুদকে উদ্ধারে নিষ্ক্রিয়তা কেন কর্তব্যে অবহেলা হিসেবে গণ্য হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল দিয়েছিল আদালত। সে সময় স্বরাষ্ট্রসচিব ও আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ইকবাল লক্ষ্মীপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া রয়েল কোচে ঢাকায় রওনা হন। তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়ার ওপর দুই মাসের প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছিলেন। রাত ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বাস থামলে তিনি নামেন।
সেখানে সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বাস থেকে নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজন ব্যক্তি ইকবালকে ঘিরে কথা বলছেন। এরপর তাঁকে দ্রুত একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। এর পেছন দিয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান যেতে দেখা যায়। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর রাতে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা।
ডা. ইকবালের বাবা এ কে এম নুরুল আলম বলেন, ‘ছেলে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এর চেয়ে বড় আনন্দ আর নেই। এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
ডা. ইকবাল মাহমুদ বলেন, মাইক্রোবাসে তুলেই তাঁর চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এ ৭ মাস ১৭ দিন চোখ-হাত বাধা অবস্থায় একটি কক্ষেই রাখা হয়েছে। এ সময় নিয়মিত খাবার দেওয়া হতো। খারার, নামাজের অজু ও নামাজ পড়তে কিছু সময়ের জন্য হাতের বন্ধন খুলে দেওয়া হতো। কেউ মারধর করেনি। আটকের কারণ জানতে চাইলে চুপ থাকে বলে ধমক দেওয়া হতো। এ সময় কোনো বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।
ডা. ইকবাল বিসিএস পাস করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বদলি হন। তাঁর স্ত্রী সোহাদা ইয়াছমিনও পেশায় চিকিৎসক। তিনি লক্ষ্মীপুরে থাকেন। তাঁদের সংসারে আরমান আহসান আরজ (৮) ও আয়েশা (৪) নামের দুই সন্তান রয়েছে।