আমার স্ত্রী হওয়ায় ফিরোজার বিরুদ্ধে মামলা : মাহমুদুর
দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রী হওয়ার কারণেই ফিরোজা মাহমুদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) আমার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করতে চান। কিন্তু আমি ভীত নই।’
আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মাহমুদুর রহমান।
মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। গতকাল রোববার রাজধানীর রমনা থানায় ওই মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
মাহমুদুর রহমান জানান, তাঁর স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদ প্রতিবছর প্রায় এক কোটি টাকা করে ব্যক্তি খাতে আয়কর দিয়ে থাকেন। তাঁর পক্ষে সম্পদের মূল্য ৬০ লাখ টাকা কম দেখানো ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ হাস্যকর ও ভিত্তিহীন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ফিরোজা মাহমুদ আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ খান মুন্নুর কনিষ্ঠ কন্যা।
সরকারকে উদ্দেশ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা আমার বিরুদ্ধে ৮১টি মামলা দিয়েছেন। আমার মায়ের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছেন। আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এখন মামলা দিলেন। সুতরাং আপনারা আমার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করতে চান। কিন্তু আমি ভীত নই। আমি এ দেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, মানবাধিকার রক্ষার জন্য, এ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশে ইসলামের মূল আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই চালাচ্ছি সে লড়াই কোনো, হুমকি, কোনো মামলা কোনো নির্যাতনে বন্ধ হবে না।’
মামলা প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দুদকের দাবি ফিরোজা মাহমুদ ২০০৩ সালে রেজিস্ট্রিকৃত তাঁর গুলশানের অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৬০ লাখ টাকা কম দেখিয়েছেন। অ্যাপার্টমেন্টটি যে জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে তার মালিক ছিলেন মরহুম ফজলুর রহমান। অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছে র্যাংগস প্রপার্টিজ লিমিটেড। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার অর্থাৎ রাজউক। রাজউক সরকারি পত্রের মাধ্যমে র্যাংগসের এমডি রোমো রউফ চৌধুরীকে অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই পত্রের প্রেরক এবং প্রাপক যথাক্রমে রাজউক এবং রোমো রউফ চৌধুরী। এই মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ফিরোজা মাহমুদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তা সত্ত্বেও কেবল তাঁরই বিরুদ্ধে দুদক উদ্দেশ্যমূলক এ মামলা দিয়েছে।’ এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা রাজউকের লিজভুক্ত প্রতিটি জমি অথবা অ্যাপার্টমেন্টের মালিকের বিরুদ্ধে করা হলে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহমুদুর রহমান আরো জানান, র্যাংগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী গুলশান অঞ্চলের সাব রেজিস্ট্রারের নিকট হলফনামা দিয়ে নিশ্চিত করেছেন, অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য কম দেখানো হয়নি। এই হলফনামা প্রদানে ফিরোজা মাহমুদের কোনো রকম ভূমিকা নেই। তিনি কেবল হলফনামার ভিত্তিতে এবং রাজউক নির্ধারিত মূল্যে সম্পত্তি কিনেছেন। একজন ক্রেতা যদি কোনো দোকান থেকে সরকারি সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কোনো পণ্য ক্রয় করেন, সেক্ষেত্রে কেবল ত্রেুতার বিরেুদ্ধে মামলা করার আইনগত ভিত্তি নেই।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ফিরোজা মাহমুদ একজন সিআইপি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বছরে প্রায় এক কোটি টাকা আয়কর দিয়ে আসছেন। আয়কর বিভাগের ২০১৫-১৭ বর্ষের প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে যে, ফিরোজা মাহমুদ উক্ত বছরে আয়কর প্রদান যথাযথভাবে সম্পন্ন করেছেন। আরেকটি প্রত্যয়নপত্রে আয়কর বিভাগ উল্লেখ করে যে, ২০১৩-১৪ আয়কর বছরের সমুদয় কর ফিরোজা মাহমুদ পরিশোধ তো করেছেনই, সর্বোপরি উক্ত বছর পর্যন্ত তাঁর কাছে সরকারের আর কোনো পাওনা নেই। সেক্ষেত্রে ২০০৩ সালের রেজিস্ট্রিকৃত অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বিষয়ে দায়ের করা মামলাটি শুধু হয়রানির জন্যই করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী, আব্দুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার নেতা রিয়াজুল ইসলাম রিজু।