পর্যটক নেই বান্দরবানে, দর্শনীয় স্থানগুলো অনেকটাই ফাঁকা!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/06/28/photo-1498649558.jpg)
পর্যটনের জেলা বান্দরবানে পর্যটক নেই। দর্শনীয় স্থানগুলোও পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেনি এবার!
প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। ঈদের আগের দিন থেকে টানা ছয়-সাতদিন পর্যটকে মুখর থাকত পাহাড়ি এ জনপদ। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও পর্যটকবাহী যানবাহনগুলোও খালি পাওয়া যেত না। কিন্তু এবারের ঈদের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। কোনো চাপ নেই পর্যটকের। অনেকটাই ফাঁকা বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউজ ও পর্যটনে ব্যবহৃত যানবাহনগুলোর কর্মচারীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। এমন চিত্র বদলায়নি আজ বুধবার ঈদের তৃতীয় দিনেও।
তবে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পাশের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাজালিয়া এবং দোহাজারী থেকেও বেড়াতে এসেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। যে কারণে কিছুটা সরব দেখা গেছে দর্শনীয় স্থানগুলো। আর কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কিছুটা নড়াচড়া দেখা যায়।
হোটের গ্রিনল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, রমজান মাসের আগ থেকেই পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছিল। ঈদে জমে উঠবে পর্যটন ব্যবসা, আশায় বুক বেঁধেছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। বাড়তি চাপ তো দূরে থাক, পর্যটকের স্বাভাবিক চাপও নেই এবারের ঈদে। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ধাক্কাটা লেগেছে পর্যটন ব্যবসায়। অথচ পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক রয়েছে এখানে।
পালকি গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফায়েত হোসেন ও হোটেল ফোর স্টারের পরিচালক রিপন চৌধুরী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাজনিত কোনো ধরনের সমস্যা নেই এখানে। প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরাও পর্যটকদের বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছে। কিন্তু পর্যটকের আশানুরূপ আগমন ঘটেনি। টানা তিন মাসের এ ক্ষতি পর্যটন ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই পুষিয়ে নিতে পারবে না।
এদিকে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে ছুটে আসে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। পাহাড় থেকে ঝড়ে পড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু, বাদুর গুহা, দেবতা পাহাড়, আলীর সুরঙ্গপথ, অতুলনীয় জলপ্রপাত নাফাখুম ও অমিয়াখুম, সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গসহ অসংখ্য পাহাড়। কী নেই এখানে। পর্যটকের মন ভোলানোর সব আয়োজন রয়েছে রূপের রানিখ্যাত বান্দরবানে। বিগত পাঁচ-দশ বছরে পাহাড়ের অর্থনৈতিক আয়ের অন্যতম খাতে পরিণত হয়েছে এ পর্যটন শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়রাও।
স্থানীয় পাহাড়ি ব্যবসায়ী মেনলং বম জানান, স্থানীয় পাহাড়িদের তৈরি কোমল তাঁতের পোশাক (কাপড়) এবং বাঁশ, কাঠের তৈরির হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের ক্রেতা হচ্ছে পর্যটকরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরাই এসব জিনিসপত্র আত্মীয়-স্বজনদের উপহার দেওয়ার জন্য এবং ঘরের শো-পিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু পর্যটক না থাকায় বেচা-বিক্রি একদম কমে গেছে। কোমল তাঁত ও হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত পাহাড়িরাও আর্থিক সংকটে ভুগছে।
ট্যুরিস্ট জিপ গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল বলেন, পর্যটকবাহী প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গাড়ি রয়েছে বান্দরবানে। গাড়িগুলোর শ্রমিকরা ঈদে দুটি পয়সা বাড়তি রোজগারের আশা করেছিল। কিন্তু পর্যটকরা বেড়াতে না আসায় শ্রমিকরা ভীষণ কষ্টে পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের এনডিসি এইচ এম আল মুজাহিদ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাগত কোনো সমস্যায় নেই বান্দরবানে। এখানে পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক এবং পর্যটক ভ্রমণবান্ধব। পর্যটকরাও বেড়াতে আসছে এখানে। তবে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কিছুটা প্রভাব পড়েছে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ও। আতঙ্কে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি এবারের ঈদে।
এইচ এম আল মুজাহিদ আরো বলেন, বর্ষায় পাহাড়ের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে উঠে। বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক এবং জীবননগর পর্যটন স্পট দুটি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্ষায় এখানে অনায়াসে মেঘ ছুয়ে দেখা যায়। ভ্রমণ পিপাসুরা নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারে দর্শনীয় স্থানগুলো।