বান্দরবানে পাহাড়ধস, নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/24/photo-1500904022.jpg)
টানা বর্ষণে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সড়কে নিখোঁজ চারজনের খোঁজ মেলেনি এখনো। অব্যাহত ভারি বর্ষণে আজ সোমবারও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে রুমার সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে। বৃষ্টির কারণে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, টানা ও ভারি বর্ষণে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় বান্দরবান-রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসে পড়ে। তখন ভাঙা সড়কে হেঁটে যাওয়ার সময় মারমা সম্প্রদায়ের দুই বোনসহ পাঁচজন নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধারকাজে।
দুর্ঘটনার প্রায় চার ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা রোববার বিকেলে মংশৈহ্লা কার্বারীর ছোট মেয়ে চিংমে হ্লার (১৮) মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এরপর দুদিন পার হয়ে গেলেও নিখোঁজ অপর চারজনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হচ্ছেন রুমা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস সহকারী মুন্নি বড়ুয়া, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা গৌতম নন্দী, ডাক বিভাগের কর্মচারী মো. রবিউল এবং পাড়ার কার্বারী মংশৈহ্লার বড় মেয়ে উমেচিং মারমা। তাঁদের খোঁজে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে ভিড় জমিয়েছেন আত্মীয়স্বজনরা।
পাহাড়ধসে বন্ধ আছে বান্দরবানের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। নিখোঁজ স্বাস্থ্য সহকারী মুন্নি বড়ুয়ার ছোট ভাই রাহুল বড়ুয়া ছোটন বলেন, ‘পাহাড়ধসে নিখোঁজ আছেন আমার বড়বোন মুন্নি বড়ুয়া (৩৫)। তিনি রুমা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসে অফিস সহকারীর চাকরি করেন। দুদিন হয়ে যাচ্ছে আমার বোনকে উদ্ধার করা যায়নি। বাড়িতে মুন্নির মেয়ে মায়ের জন্য কান্না করছে।’
মংশৈহ্লা কার্বারী বলেন, ‘পাহাড়ধসে আমার দুই মেয়ে মাটিচাপা পড়েছে। ছোট মেয়ে চিংমে হ্লার (১৮) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু বড় মেয়ে উমেচিং মারমার খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার সকালে নিখোঁজ চারজনকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টিতে পানির সঙ্গে নামছে পাহাড়ধসের মাটি। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধারকর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন।’
এদিকে ভারি বর্ষণে বান্দরবানে রুমা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সোমবারও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধসে জেলা শহরের কালাঘাটা, বালাঘাটা, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নতুন করে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
বান্দরবানের মৃত্তিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় বান্দরবানে ২০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২৩ মিলিমিটার। আজও ভারি বর্ষণ অব্যাহত আছে। টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কা আরো বাড়ছে।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, পাহাড়ধসে নিখোঁজ চারজনকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি। উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অব্যাহত ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসে প্রাণহানির শঙ্কা বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।