শ্রমিক লীগ নেতা তুফানসহ তিনজন রিমান্ডে
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/30/photo-1501414868.jpg)
বগুড়ায় মেয়েকে ধর্ষণের পর মা ও মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ তিনজনকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। অন্য দুজন হলেন তুফানের সহযোগী রুপম ও আলী আজম।
আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের বিচারক শ্যাম সুন্দর রায় এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ জানান, দুপুরের দিকে তুফান সরকারসহ তিনজনকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আসামি তুফান সরকার ও তাঁর সহযোগীরা এসএসসি পাস এক ছাত্রীকে ভালো কলেজে ভর্তি করার কথা বলে গত ১৭ জুলাই শহরের নামাজগড় এলাকায় তাঁদের বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গত শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তাঁর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিসহ কয়েকজন মিলে ওই ছাত্রী ও তাঁর মাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেন। তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজ হাসপাতালে মেয়ের মা বলেন, ‘আমরা সমাধানের জন্য কমিশনারের (কাউন্সিলর) কাছে গেছি। কমিশনার উল্টা মা আর মেয়ের চুল কেটে, এসএস পাইপ দিয়ে আমাদের মা-মেয়েকে মারছে। অনেক নির্যাতন করছে, পাঁচ মিনিট পরপর টর্চারিং, পাঁচ মিনিট পরপর আমাদের মাইর। কমিশনার (কাউন্সিলর), কমিশনারের মা ও তাঁর বোন আশা। এই তিনজনার চরম বিচার চাই, চরম শাস্তি হোক।’
আজ দুপুরে মা ও মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে যান বগুড়ার জেলা প্রশাসক নূর-ই আলম সিদ্দীক। এ সময় তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তাঁদের চিকিৎসা ও পড়ালেখা খরচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলেও জানান।
সাংবাদিকদের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরিবার থেকে আইনগত সাপোর্ট দেওয়ার যে জায়গাটি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ওকে আইনগত যতটুকু সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন এই মামলাটি পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এবং ন্যায্য বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে, এই কাজটি আমরা করব। পুলিশের মতো করে আইজি রিপোর্ট, তদন্ত করে যাবে পুলিশ বিভাগ। আমরা একটি অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ ইনকোয়ারি করব- এটার সাথে যে জনপ্রতিনিধি জড়িত আছে, তার বিরুদ্ধে যাতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেই জায়গাটি আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’
গতকাল শনিবার ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে তুফান, রুমকি ও আশাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেয়েটির মা। শুক্রবার রাতেই পুলিশ মূল আসামি তুফান, তাঁর সহযোগী রূপম, আলী আজম ও আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আতিকুর। আজ বাকি তিনজনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে আজ বিকেল ৪টায় মা-মেয়ের ওপর ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শহরের সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারে সচেতন নাগরিক সমাজ, সুজন, প্রশাসনের জন্য নাগরিক ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়।