বগুড়ায় ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রীর জবানবন্দি
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/08/01/photo-1501601027.jpg)
বগুড়ায় ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার সেই ছাত্রী দুটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রথমে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শ্যামসুন্দর রায়ের কাছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
পরে ওই ছাত্রীকে বিকেল সাড়ে ৫টায় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ (শিশু আদালত)-এ হাজির করা হয়। সেখানে অতিরিক্ত দায়রা জজ এমদাদুল হকের এজলাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ও ৯-এর ১ ধারায় ওই ছাত্রী জবানবন্দি দেয়।
দুই আদালতে জবানবন্দি শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ মেয়েটিকে সেফ হোমে রাখার আবেদন করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আমানুল্লাহ জানান, নিরাপত্তার জন্য মেয়েটিকে সেফ হোমে রাখার আবেদন করা হয়। আদালত মা ও মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আদেশ দেন।
মেয়েকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার ও তাঁর সহযোগীরা এসএসসি পাস ওই ছাত্রীকে ভালো কলেজে ভর্তি করার কথা বলে গত ১৭ জুলাই শহরের নামাজগড় এলাকায় তাঁদের বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গত শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তাঁর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিসহ কয়েকজন মিলে ওই ছাত্রী ও তাঁর মাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেন। সেই সঙ্গে বগুড়া ছাড়ার হুমকি দেন। মা ও মেয়েকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে মেয়ের মা বলেছেন, ‘আমরা সমাধানের জন্য কমিশনারের (কাউন্সিলর) কাছে গেছি। কমিশনার উল্টা মা আর মেয়ের চুল কেটে, এসএস পাইপ দিয়ে আমাদের মা-মেয়েকে মারছে। অনেক নির্যাতন করছে। পাঁচ মিনিট পরপর টর্চারিং, পাঁচ মিনিট পরপর আমাদের মাইর। কমিশনার (কাউন্সিলর), কমিশনারের মা ও তাঁর বোন আশা। এই তিনজনার চরম বিচার চাই, চরম শাস্তি হোক।’
শুক্রবার রাতেই পুলিশ মূল আসামি তুফান, তাঁর সহযোগী রূপম, আলী আজম ও আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আতিকুর। রোববার বাকি তিনজনকে আদালতে হাজির করে তিনদিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
রোববার দুপুরে পুলিশ তুফান সরকারের শ্বশুর জাহিদুল ও নাপিত জীবনকে বগুড়া শহর থেকে গ্রেপ্তার করে। সন্ধ্যার পর বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ দল পাবনা শহরের হেমায়েতপুরে অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর মার্জিয়া আকতার রুমকি ও তাঁর মা রুমিকে গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকায় ডিবি পুলিশের একটি দল সাভার থেকে তুফানের স্ত্রী আশা, গাড়িচালক জিতু ও সহযোগী মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার কাউন্সিলর রুমকিকে চারদিনের ও বাকি ছয় আসামিকে দুদিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।