৩৬ জনকে ডিঙিয়ে নিয়োগ পেলেন মহাপরিচালক!
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পদে গত ৩০ জুন দায়িত্ব নিয়েছেন মো.হামিদুর রহমান। এর আগে তিনি ছিলেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ও দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের পরিচালক। অভিযোগ উঠেছে, ৩৬ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে হামিদুর রহমানকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
১৯৮২ সাল থেকে অধিদপ্তরে মহাপরিচালক পদে নিয়োগের শুরু থেকে তিন দশকেরও বেশি সময়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের এ ধরনের নজির এবারই প্রথম। আর এ কারণে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে অধিদপ্তরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটি গ্রেড-১ অর্থাৎ সচিব পদমর্যাদার। আর গ্রেড-২ পরিচালকের পদ হচ্ছে অতিরিক্ত সচিব এবং অতিরিক্ত পরিচালকের গ্রেড-৩ পদটি যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। অর্থাৎ যুগ্ম সচিব থেকে সরাসরি সচিব পর্যায়ের পদে উন্নীত হয়েছেন হামিদুর রহমান। এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ইচ্ছাই কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে হামিদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এ দায়িত্ব চাইনি। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় এবং রাষ্ট্র আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছে। যাঁরা রাষ্ট্রীয় আদেশ মান্য করেন তাঁরা আমাকে সহযোগিতা করবেন এটা আমি আশা করি। অনেকে সহায়তা করছেনও। আমি সবার সহায়তা কামনা করি।’
৩৬ জনকে পাশ কাটিয়ে মহাপরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাইলে হামিদুর রহমান বলেন, ‘এটি মন্ত্রীর কাছে জানতে চান।’
তবে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বর্তমানে নিজ এলাকায় থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া কৃষিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা করায় এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। বদলি কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ভয়ে এখন কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ জন পরিচালককে বিবেচনা না করে কী কারণে একজন অতিরিক্ত পরিচালককে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়। পরিচালকের কথা বাদ দিলেও অতিরিক্ত পরিচালকের মধ্যেও হামিদুর রহমানের অবস্থান ২৭ নম্বরে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এতে করে মাঠপর্যায়েও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
অধিদপ্তরের অন্য এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একজন জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে এখন চাকরি করতে হবে, এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে? চাকরির শেষ জীবনে এসে এ ধরনের অপমান সহ্য করা যায়?’
অনেকে কর্মকর্তাই এ ব্যাপারে ক্ষোভের কথা জানালেও নিজেদের নাম উল্লেখ করতে কেউ রাজি নন। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, কৃষির উন্নয়নে মন্ত্রীর অনেক অবদান আছে, কিন্তু যাঁদের দিয়ে তিনি উন্নয়ন করাবেন তাঁদের মধ্যেই এখন তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। তাতে করে সামগ্রিকভাবে কৃষির কতটুকু কল্যাণ হবে তা সময়ই বলে দেবে।’
অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেই একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তার মহাপরিচালক হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার পরই সবার সহযোগিতা চেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা হামিদুর রহমান। তবে কতটুকু সহযোগিতা পাবেন আর নিজেই বা কতটুকু দক্ষতা দেখাতে পারবেন তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।