খাল দখল, অল্প বৃষ্টিতেই ‘পানিবন্দি’ চান্দগাঁও
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চার নম্বর ওয়ার্ডের চান্দগাঁওয়ের ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরির ঠিক বিপরীতে অবস্থিত বশিটেন্ডল বাড়ি এবং টেক বাজার। আর এ এলাকার ভেতরেই রয়েছে টেক বাজার পুল খাল। এ খালটি সরাসরি কর্ণফুলীর সঙ্গে সংযুক্ত।
এলাকাবাসী জানান, একযুগ ধরে বৃষ্টিপাতে ও জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদীর পানি টেকবাজার খালের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এ ওয়ার্ডে নতুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও এখনো তিনি কার্যক্রম শুরু করেননি। তবে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এই জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেকটা ঝুলে রয়েছে প্রকল্প। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মো. ইউসুফ ঈদে জলবদ্ধতায় দুর্ভোগের অবস্থা দেখিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি ছোট থেকেই এলাকায় জোয়ারের পানি আসতে দেখছি। কিন্তু ওই সময় পানি উঠে আবার তা চলে যেত, কারণ তখন পানি যাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন পানি নামার ছোট ছোট খাল ও নালা দখল করে ফেলায় এখন আর পানি বের হতে পারে না। ফলে এলাকায় প্রায় সময়েই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
ইউসুফ আরো বলেন, ‘যেখানে যাচ্ছি, যার ঘরের সামনে যাচ্ছি সেখানেই পানি। আমি ছোট থেকে জানি, কোথায় কোথায় পানি ওঠে। কিন্তু আমাদের এই এলাকায় এর আগে কখনো পানি ওঠে নাই।’
গতকাল শুক্রবার ঈদের দিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এলাকার বাসিন্দারা ঈদে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। যাঁরা বের হচ্ছেন তাঁদের হাঁটু পানি ডিঙিয়ে কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তা বেহাল থাকায় ও জলবদ্ধতার কারণে রিকশা বা সিএনজিচালিক অটোরিকশাও প্রবেশ করতে চায় না। ফলে বাসিন্দাদের বাধ্য হয়েই নোংরা ও আবর্জনাময় পানির মধ্যেই বেরুতে হচ্ছে।
বশিটেন্ডল বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. নুরু ও সেলিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, নোংরা ও দুর্গন্ধ পানিতে পথ পাড়ি দিয়ে এই এলাকার বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হয়। ফলে অনেকেই নানা অসুখে ভোগে। এখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস।
মো. নুরু ও সেলিম আরো জানান, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব জলবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা উঁচু করা, নর্দমা এবং পানি যাওয়ার পথ সম্প্রসারণে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি সফল হতে পারেননি। এরই মধ্যেই নতুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনো দায়িত্বভার বুঝে নেননি।
টেকবাজার এলাকার কনফেকশনারী ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বৃষ্টি বা জোয়ার পানি উঠলে তা নেমে যাওয়ার মতো অবস্থা গড়ে না ওঠায় ভ্যান বা পিকআপ ঢুকতে পারে না। ফলে এখানে ব্যবসা নেই। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চান্দগাঁও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বশিটেন্ডল ও টেকবাজার এলাকায় জোয়ারের পানি আসে। ওখানে এখনো জলাবদ্ধতা আছে। পানি উঠলে ওখানে অস্বাভাবিক অবস্থা হয়। এই এলাকায় প্রায় ২০ হাজারের মতো ভোটার রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপ সম্পর্কে সাবেক কাউন্সিলর বলেন, ‘ওখানে যে রাস্তা রয়েছে তা আরো চার ফুট উঁচু করতে হবে। এ ছাড়া এক বছর আগে খাল ও নর্দমা দখল হয়ে যাওয়ায় আমরা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ করতে গিয়ে যেখানে ২০ ফুট দরকার ছিল সেখানে ২৬ ফুট করেছিল আর যেখানে ২০ ফুট করার ছিল, সেখানে ২২ ফুট করেছিলেন। কিন্তু এভাবে উচ্ছেদের অর্ডার ছিল না। উচ্ছেদের কথা ছিল মূলত, ১৬ ফুট ঘরের ভেতর আর ছয় ফুট ড্রেন। ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ঘর উচ্ছেদ করা যাবে না, তদবির আছে। তখন এলাকাবাসীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের কথাকাটাকাটি হয়। পরে তা নিয়ে সিটি করপোরেশনে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট এ ঘটনার জন্য মাফ চান। পরে বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা হলেও উচ্ছেদ কার্যক্রম ঝুলে যায় এবং এখনো তা উচ্ছেদ করা হয়নি। তাই খাল দখল হওয়ার কারণে পানিগুলো যে দ্রুত নামবে তা বন্ধ রয়েছে। কারণ এসব এলাকায় মূলত খাল ও নর্দমাগুলো যেখানে ৬০ ফুট ছিল, তা দখল করে ছয় ফুট করে ফেলা হয়েছে।’
এ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প সম্পর্কে মাহবুব আলম আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও তা করেনি। শুধু এই দুই এলাকায় নয়। আরো বেশ কিছু এলাকার খাল ও নর্দমা দখলে থাকায় পানিবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এগুলো সম্প্রসারণে চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বশিটেন্ডল ও টেকবাজার এলাকার রাস্তা তৈরি ২৭ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে। এখানে আরো কাজ বাকি আছে যা করতে আরো এক কোটি টাকা প্রয়োজন।