চিংড়ি চাষে জলাবদ্ধতা, সাতক্ষীরার ৭৬ পরিবার পানিবন্দি
সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ইটাগাছার কামাননগরের ৭৬টি পরিবার এক মাস ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে দুর্ভোগ ক্রমে বাড়ছে। বসতঘর পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে পানি। আর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে চিংড়ি ঘেরের জন্য বেড়িবাঁধের কারণে।
এলাকাজুড়ে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কাঁচা ও পাকা টয়লেট ডুবে যাওয়ায় পানি ও মলমূত্র একাকার হয়ে এলাকায় দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। বাড়ি থেকে বের হতে নৌকার বিকল্প শোলার তৈরি ভেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিলের ৬০টি বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, কামাননগরের কয়েকজন লোক অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করছেন। তাঁরা ইছামতী নদীর পানি শাখরা স্লুইসগেট দিয়ে এনে এই বিলে ফেলে ছোট-বড় বেড়িবাঁধ তৈরি করেছেন। এর ফলে বৃষ্টির পানি খড়িবিলার বিল দিয়ে বাঁকাল খালে পড়তে পারছে না। এতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
কামাননগরের বাসিন্দা আলী আজম ডাবলু বলেন, ‘ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। এতে আমার বসতবাড়ির সব ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার মতো এ এলাকার ৭৬টি পরিবারের বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। আমাদের বিলের বীজতলাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।’ একই গ্রামের কানন সরকার বলেন, ‘কোমরসমান পানি ভেঙে চলাচল করা যাচ্ছে না। ঘাস, গাছগাছালি পচে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। মলমূত্র ত্যাগের সব সুযোগও নষ্ট হয়ে গেছে।’
এলাকার সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘সব ঘরে পানি ওঠায় রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পাশের পাড়ার একটি বাড়িতে রান্না করে এনে খেতে হয়।’ তিনি জানান, পচা পানিতে তাঁর ছেলেমেয়েদের গায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। একই কথা জানালেন এলাকার বাসিন্দা হাসেম আলী, আসমত আরা, রজব আলী প্রমুখ। তাঁরা বললেন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়েছে।
কামাননগর এলাকার সমাজসেবক শফিকুর রহমান বলেন, ‘শাখরা স্লুইসগেট দিয়ে ইছামতীর পানি এনে এখানে চিংড়ি চাষ করছেন এজাহার হাজি, সাইফুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলামসহ ১১ ব্যবসায়ী। তাঁদের দেওয়া বেড়িবাঁধের কারণে পানি অপসারিত হতে পারছে না।’
এক মাস ধরে এ অবস্থা চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি পানি অপসারণের। অবশেষে সোমবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল জলাবদ্ধ এলাকায় গিয়ে ‘চিংড়িচাষিরা নিজেরাই বাঁধ কেটে পানি সরিয়ে দেবেন’—এই মর্মে তিনজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খড়িবিলা ও বাঁকাল খালের মধ্যে থাকা ১৫টি নেট পাটা (মাছ আটকানোর জন্য বাঁশের তৈরি পাটা) তুলে দিয়েছি। দু-একটি ঘেরের বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। অন্যগুলো দু-একদিনের মধ্যে কাটা হলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’