ভারতীয় নারীকে ‘গণধর্ষণ’, আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ভারতীয় এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন ওই নারীর শাশুড়ি। এতে আওয়ামী লীগের ওই নেতাসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
বিচারক আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম রবিউল হাসান। তিনি দলটির কলারোয়া উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক। যুগিখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানও তিনি।
রবিউল হাসান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর ভাষ্য, এলাকায় দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
মামলার আরজিতে ভারতীয় নারীর শাশুড়ি উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলে ভারতের পশ্চিম বাংলায় দিনমজুরের কাজ করতে গিয়েছিলেন। প্রায় চার মাস আগে তিনি সেখানকার বিথারী গ্রামের এক মেয়েকে দেশে এনে বিয়ে করেন। এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে আদালতের এফিডেভিটও রয়েছে।
আরজিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই দুজন সংসার করার এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান তাঁদের নানাভাবে বিরক্ত করতেন। এরই একপর্যায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যান রবিউল তাঁদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ আসার খবর জানান। একই সঙ্গে ভারতীয় নারী ও তাঁর স্বামীকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অফিসের দোতলায় নিয়ে যান তিনি। পরে ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে সংসার করার কথা বলে ওই দিনমজুরের কাছে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। চাঁদা না দিলে ভারতীয় নারীকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন চেয়ারম্যান।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওই চেয়ারম্যান থানার ওসির সঙ্গে কথা বলানোর নাম করে মেয়েটিকে রাতেই নিয়ে যান। তাকে থানায় না নিয়ে কলারোয়ার ঝিকরা গ্রামের সঞ্জয়ের বাড়িতে তোলা হয়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে প্রথমে চেয়ারম্যান রবিউল হাসান ও পরে তাঁর সহযোগী সোহাগ হোসেন, সোহাগ দফাদার, আসাদুজ্জামান আসাদ ও কদম আলী ধর্ষণ করেন। পরে গভীর রাতে ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে চৌকিদার এমাদুলের মাধ্যমে তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন চেয়ারম্যান। ভোরে তার শাশুড়ি ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে ছেলের বউকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সকালে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী ওই নারীকে প্রথমে কলারোয়া হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা রেকর্ড না করে ফেরত দেয়। বাধ্য হয়ে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগিখালী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান বলেন, ‘মেয়েটি ভারতীয়। সে সেখানে নবম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা তাকে ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি কলারোয়া থানার পুলিশকেও জানানো হয়। একপর্যায়ে মেয়েটি কারো পরামর্শ অনুযায়ী একটি সাজানো মামলায় আগ্রহী হয়। তারা তাকে বোঝায় যে, এমন একটি মামলা করলে চেয়ারম্যান তোমাকে তোমার ভারতীয় বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে পারবেন না। তুমি নানা ধরনের সুবিধাও পাবে। নিজ দলের লোকজনের কোন্দলের জেরে এমন একটি মিথ্যা অভিযোগ খাড়া করা হয়েছে।’