স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে এএসআইয়ের বাড়িতে অনশন
শেরপুরে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বাড়িতে অনশনে বসেছেন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া এক ছাত্রী। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শেরপুর জেলা সদরের আলিনাপাড়া এলাকার বাড়িতে অনশন করছেন তিনি।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই এএসআই ও তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ছাত্রী। আদালত আগামী ১৮ অক্টোবর বিবাদীদের সশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলেছেন।
ওই এএসআইয়ের নাম আরিফুজ্জামান সোহাগ। তিনি এখন ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্তব্যরত বলেও জানিয়েছেন ওই ছাত্রী।
অনশনে বসা ওই ছাত্রী জানান, একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে আরিফ তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আরিফ তাঁকে টাঙ্গাইল জেলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান এবং রাতে ‘কাজি’ ডেকে কাবিননামায় স্বাক্ষর করে বিয়ে করেন। এর পর থেকে আরিফ তাঁর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতোই মেলামেশা করতেন। এরই একপর্যায়ে আরিফকে ঘরে তুলে নিতে চাপ দেন ওই ছাত্রী। কিন্তু আরিফ তাঁর ছোট বোনের বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। এদিকে তিনি জানতে পারেন, আরিফ গোপনে আরেক মেয়েকে বিয়ে করার জন্য দিন তারিখ ঠিক করেছেন। এ কথা জানতে পেরে স্ত্রীর মর্যাদা চাওয়ায় আরিফ বিয়ের কথা অস্বীকার করেন এবং কাবিননামাও ভুয়া বলে জানান।
এরপর বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হন বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। তিনি জানান, স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে আমরণ অনশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ওই ছাত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি আরিফের স্ত্রী, আমি এই বাড়িতে থাকতে চাই।’
কলেজছাত্রী অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘ওরা (আরিফের পরিবার) আমাকে বাড়ির ভেতরে নিচ্ছে না। আমি বাড়ির বাইরে থাকছি। একবেলা খাবার দিলে আরেক বেলা দিচ্ছে না। এই বাড়ির লোকেরা (এএসআই আরিফের বাড়ি) খারাপ ব্যবহার করছে। যেভাবে কুকুর-বিড়ালকে খাবার দেয়, সেইভাবে তারা আমাকে খাবার দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে এএসআই আরিফুজ্জামান সোহাগকে ফোন করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
তবে আরিফের মা বলেন, ‘আমি আগে এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না। ওই মেয়েও আমাকে কিছু জানায়নি। এখন আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা আমরা মেনে নেব।’
ঠিকমতো খাবার না দেওয়া ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে আরিফের মা বলেন, ‘এলাকার মানুষ আছে। ওরা দেখেছে, ওদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন। তিনবেলা করেই খাবার দিচ্ছি। আমরা ওর সঙ্গে পালা করে উঠানে থাকছি ও যাতে ঘুমাতে পারে।’
আরিফের চাচা মঞ্জু বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে মেয়েটিও আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে, আমরাও আদালতে মামলা করেছি। এখন আদালতে সিদ্ধান্ত ছাড়া করার কিছু নেই।’
চাচা আরো বলেন, ‘ওর কাবিননামায় তারিখ লেখা ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমার ভাতিজার (আরিফুজ্জামান সোহাগ) ডিউটি ছিল। সব ভুয়া রেকর্ড তুলেছে। কোর্টে গেছে, কোর্টে কেস করেছে। এখন বাকিটা কোর্টে যা সিদ্ধান্ত হবে তাই। আইনের মাধ্যমে গেছে, আইন ফয়সালা দেবে।’
এদিকে স্থানীয়দের বক্তব্য, বিয়ের ব্যাপারটি সঠিক কি না তাঁরা জানেন না। তবে আরিফুজ্জামান সোহাগের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি সত্যি।