‘আমি ফেলনা নই, প্রতিহিংসার শিকার : সাকা চৌধুরী
‘আমি তো ফেলনা কোনো লোক নই। আমার কিছু কথার কারণে আজ হয়তো অনেকেই ক্ষুব্ধ। আজ আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি নির্দোষ, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’ কথাটি মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর।
আজ বুধবার সকালে আপিল বিভাগের রায় শোনার পর এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর জেলার মো. ফরিদুর রহমান রুবেল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বর্তমানে কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে এ কারাগারেই আছেন। এর আগে তিনি ২০০৯ সাল থেকে কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ২-এ বন্দী ছিলেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর সুপার সুব্রত কুমার জানান, গণমাধ্যমে রায় শোনার পর জেলার ফরিদুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আজ সকাল ১০টার দিকে সাকা চৌধুরীর সেলে যান। এ সময় তাঁরা তাঁর রায়ের কথা জানান। তবে রায়ের কপি হাতে পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে সেলে বসে সাকা চৌধুরী নিজেই রেডিওর মাধ্যমে তাঁর রায়ের খবর শুনেছেন।
জেলার মো. ফরিদুর রহমান রুবেল জানান, মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের খবর শোনার পরও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোবল শক্ত ও স্বাভাবিক ছিল। তিনি স্বভাবসুলভ হাসি-খুশি ছিলেন। রায় শোনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আমাদের বলেন, তিনি আইনের সর্বোচ্চ লড়াই লড়বেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি রিভিউ করব। আমি আশাবাদী আমার রিভিউ টিকবে এবং ন্যায় বিচার পাব।’
সাকা চৌধুরী কারা কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমি দেশের জন্য, জনগণের জন্য রাজনীতি করেছি। আমিতো ফেলনা কোনো লোক নই। আমার কিছু কথার কারণে আজ হয়তো অনেকেই ক্ষুব্ধ। আজ আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নির্দোষ, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপি নেতা।
আজ বুধবার সকাল ৯টা ৪ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল ১-এ প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল করে ওই অভিযোগে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়, বাকি অভিযোগগুলোতে ট্রাইব্যুনালের আদেশই বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর করে ৪০ বছর এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর করে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ ২৩টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এর পর ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।