শীতে বন্য হাতির হামলার শঙ্কায় রোহিঙ্গারা
আসছে শীতে বন্যহাতির কারণে আরো বড় ধরনের জীবনঝুঁকিতে পড়তে পারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। একই সঙ্গে বন্যহাতির জীবনও হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। এমন বাস্তবতায় হাতি চলাচলের পথে আপাতত বসতি স্থাপন না করা বা বসতি থাকলে তা দ্রুত অপসারণের কথা জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
বান্দরবান ও কক্সবাজার ঘুরে জানা যায়, হাতির আক্রমণে বিপন্ন হওয়ার সবচেয়ে বেশি শঙ্কা রয়েছে রোহিঙ্গা শিশুদের। ত্রাণের জন্য নিয়মিতই অধীর অপেক্ষায় থাকা এই শিশুরা এমনিতেই যুদ্ধ করে চলেছে রোগবালাইয়ের সঙ্গে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে হাতির আক্রমণের ভয়।
এর আগে দুবার বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন চার রোহিঙ্গা, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিনজন।
কক্সবাজারের জেলা সদর হাসপাতালে হাতির আক্রমণে আহত রোহিঙ্গা এক বৃদ্ধ এনটিভিকে বলেন, ‘আঁরা (আমরা) এক ফ্যামিলির (পরিবার) মাঝে ছয়জন আছিলাম। এক..মাইয়া মারা গিয়ে (গেছে)। আঁরা তিনজন দুখ পাইয়ি (ব্যথা পেয়েছি)।’
সাধারণত বন্যহাতি দিনের বেলায় গহীন অরণ্যে থাকলেও রাতে পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছুটে বেড়ায়, চলে আসে লোকালয়ে। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরেই চলছে নিয়মের ব্যতিক্রম, বলছেন স্থানীয়রা।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাস্তার পশ্চিম দিকে চলে গেছে হাতি। রোহিঙ্গা বসতির কারণে এদিকে হাতি পূর্ব দিকে আইসতে পারতেছে না।’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার মনে হয়, ওরা পশ্চিমে রয়ে গেছে। যদি পূর্ব দিকে থাকত, তাহলে এদিকে আসত।’
টেকনাফের পশ্চিম দিকের অভয়ারণ্যে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল, গহীন অরণ্যে চলে গেছে হাতির পাল। এ বিষয়ে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘মানুষের ভয়ের কারণে হাতি একটু রাস্তার পাশে কম আছে। নিচে তো এখন আসে না। নিচে আসবে যে শীতকালে, কয়েকদিন পরে।’
আর এমন পূর্বাভাসের সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার খবরও পৌঁছে গেছে রোহিঙ্গাদের অনেক ক্যাম্পে, যে কারণে তাঁরা উদ্বিগ্ন।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় মধ্যবয়সী এক রোহিঙ্গা পুরুষ বলেন, ‘বেশি ডরের (ভয়) মাঝে আছি। আঁরা কোন জায় ন ফারি (কোথাও যেতে পারছি না)। হাতি আইলে আঁরার তো ডর লাগের (হাতি আসলে আমাদের ভয় লাগে)।’
সর্বশেষ হাতিশুমারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট ২৬৭টি বন্যহাতির মধ্যে কক্সবাজার জেলাতেই রয়েছে ১১৭টি, যার ৭৮টিরই বসবাস জেলার উখিয়া এবং টেকনাফের অভয়ারণ্যে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের বিভাগীয় (দক্ষিণ) বন কর্মকর্তা আলী কবির এনটিভিকে বলেন, ‘ন্যাচারালি অগ্রহায়ণ-পৌষ এই মাসের দিকে হাতি বেশি চলাচল করবে কক্সবাজার অঞ্চলে। সিদ্ধান্ত হইছে যে, হাতির করিডর, পথ যেটা, এই পথটাতে আর কোনো বাড়িঘর করা হবে না। করা হলে এগুলো অপসারণ করে ফেলা হবে। তো এভাবেই আমরা মোটামুটি একটা ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।’
কক্সবাজার বন সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘হাতির যে আবাসস্থল ছিল, এই আবাসস্থলে এখন রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরি হয়েছে। তাহলে হাতিগুলা যাবে কোথায়? হাতিকে আবার অন্য দেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাদের নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নাই। তারা বাধ্য হয়ে কিন্তু…হয় মানুষকে আক্রমণ করবে না হয় তাদের না খেয়ে, আবাসস্থল না পেয়ে তাদের মরে যেতে হবে।’