দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নেবে’ সেন্ট্রাল হাসপাতাল
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে (সিজারিয়ান) সন্তান জন্ম দেন পাপিয়া বেগম (২৬)। গত ১২ সেপ্টেম্বর গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমা হকের তত্ত্বাবধানে ডা. সালমা চৌধুরী অন্তঃসত্ত্বা পাপিয়ার অস্ত্রোপচার করেন।
স্বজনরা জানান, এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে পাপিয়া আবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পেটে ব্যথা তা থেকেই যায়। স্বামী আবদুল লতিফ তাঁকে এবার সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. নাজমার ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যান। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ডা. নাজমা তাঁর চেম্বার থেকে তাঁদের গালিগালাজ করে বের করে দেন। এরপর সেই হাসপাতালেরই আরেক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আহমেদ ন্যান্সি রোগীকে মুগদা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেওয়ার পর বিভিন্ন পরীক্ষার পেছনে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। পাপিয়া স্বামী আবদুল লতিফ পোশাক কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। এই খরচ বহন তাঁর জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এরপর লতিফ তাঁর স্ত্রীকে আবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গাইনির চিকিৎসক ডা. জেসমিন আরা বেগমের তত্ত্বাবধানে গত ১৩ অক্টোবর পাপিয়াকে ভর্তি করা হয়। সেদিনই সন্ধ্যা ৭টায় পাপিয়ার আবার অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে একটি বড় আকারের গজ (অপারেশনের সময় রক্ত পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত) বের করা হয়।
এ ব্যাপারে ডা. জেসমিন আরা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই রোগী গত বৃহস্পতিবার আমার কাছে আসে। তখন সে অনেক বেশি অসুস্থ ছিল। তারা বলল যে এক মাস আগে পাপিয়াকে ঢাকা মেডিকেলে অস্ত্রোপচার করেছে। এর পর থেকেই অবস্থা খারাপ রোগীর। প্রচণ্ড বমি, গন্ধ ও ব্যথা ছিল। এরপর দেখলাম যে তাদের সাথে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টও আছে। এরপর আমি প্রাথমিকভাবে আরো কিছু পরীক্ষা করলাম। দেখলাম তাঁর পেটটা বেশ ফোলা। এরপর আমার সন্দেহ হলো যে পেটে কিছু একটা থাকতে পারে। এরপর আমাদের এখানেও একটা আলট্রাসনোগ্রাম করা হলো। সেখানেও একই রিপোর্ট তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচারের সময় দেখা গেল যে পেটের ভেতর একটা গজ, যেটা আমরা অপারেশনের সময় রক্ত বা অন্য কিছু মোছার জন্য ব্যবহার করি; সেটা থাকার কারণে তাঁর পেটের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। তাঁর খাদ্যনালি একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে গিয়েছিল। আর পেটে অনেক পুঁজ জমে ছিল। এরপর সব কিছু আমরা বের করে ক্লিন করে আবার সেলাই দেই। এরপর রোগী আস্তে আসতে সুস্থ হয়ে উঠছে।’
পুরো ঘটনা জানার পর সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়। হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুনছুর আলী ও ডা. এ কে এম মোজাহার হোসেন বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার বিকেল থেকেই তদন্ত শুরু করেন।
ডা. মুনছুর আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এমন অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তবে ওই চিকিৎসকদের এই হাসপাতালে আর বসতে দেওয়া হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের আরেক উপপরিচালক ডা. এ কে এম মোজাহার হোসেন গতকাল রাত ১০টার দিকে জানান, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই চিকিৎসকদের হাসপাতালে আর বসতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে রোগীর এ ঘটনা শুনে হাসপাতালের মূল খরচের ৫০ শতাংশ টাকা ছাড় দেয় কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকদের বিল হয়েছিল সেখান থেকেও ২০ হাজার টাকা কম করা হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ রকম একটা ঘটনা আমি সাংবাদিকদের কাছে শুনেছি। যদি এ রকম কোনো ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে ভিকটিম (ভুক্তভোগী) তো আমার কাছে এলে ব্যবস্থা নিতাম। পাপিয়া নামের এক নারী সিজারিয়ান হয়েছে, এটা আমি জানি। সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও যদি বিষয়টি আমাদের বলতেন, আমরা তদন্ত করে দেখতাম।’
পাপিয়া যা বললেন
গতকাল সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পঞ্চম তলায় ৮ নম্বর বেডে বসে কাঁদছেন পাপিয়া। তিনি বলেন, ‘আমারে ডাক্তাররা অপারেশন করে পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দিয়েছিল। এরপর জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। বাড়িতে গিয়েই গায়ে প্রচণ্ড জ্বর আর পেটের ব্যথা শুরু হয়। এমন ব্যথা যে বলে বুঝানো যাবে না ভাই। আজও আমার ছেলেটারে বুকে নিয়ে আদর করতে পারি নাই। আমার স্বামী আমারে নিয়া কত দৌড়াদৌড়ি করছে। ডা. নাজমার কাছে গিয়ে অনেক অনুরোধ করছে। কিন্তু তিনি কোনো পাত্তাই দেন নাই। আমাদের গালাগালি দিয়ে বের করে দিয়েছেন। এখন এই হাসপাতালে আমার অপারেশন করে বড় একটা গজ কাপড় বের করছে ডাক্তার। এখন তেমন ব্যথা নাই, কিন্তু টাকার অভাবে বাড়ি যাইতে পারছি না।’
পুরো ঘটনা জানার পরে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়। হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুনছুর আলী ও ডা. এ কে এম মোজাহার হোসেন বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার বিকেল থেকেই তদন্ত শুরু করেন।
ডা. মুনছুর আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এমন অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তবে ওই ডাক্তারদের এই হাসপাতালে আর বসতে দেওয়া হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের আরেক উপপরিচালক ডা. এ কে এম মোজাহার হোসেন গতকাল রাত ১০টার দিকে জানান, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই চিকিৎসকের (ডা. নাজমা হক ও ডা. ফারহান আহমেদ ন্যান্সি) ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া রোগীর ঘটনা শুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মূল খরচের ৫০ শতাংশ টাকা ছাড় দেয়। চিকিৎসকদের বিল থেকেও ২০ হাজার টাকা কম করা হয়।