নরসিংদীতে তিন মেয়েসহ মা ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ
নিখোঁজের ১৩ দিন পরও নরসিংদীর এক নারী ও তাঁর তিন মেয়ের খোঁজ মেলেনি। তাঁদের সন্ধান না পেয়ে ভীষণ উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন স্বজনরা।
গত ২ নভেম্বর নরসিংদী শহরের গফুর হাজি মার্কেট থেকে পূর্ব ভাগদী এলাকার আবদুল মতিন খানের মেয়ে মমতা বেগম (৪০) ও তাঁর তিন মেয়ে সাদিয়া আফরোজ (১৮), সুমাইয়া আক্তার (১৬) ও লিমা আক্তার (১০) নিখোঁজ হয়।
এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকালে মমতার ভাই আবদুল কাদির খান বাদী হয়ে নরসিংদী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নিখোঁজ মা ও মেয়েদের গুম বা অপহরণ করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না পুলিশ।
মমতা বেগমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের বলভদ্রদী গ্রামের আবু সালেহর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকবারই মমতা সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে তিন মেয়েসহ বাবার বাড়িতে যান মমতা। গত ২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাউকে কিছু না বলে সন্তানসহ বাবার বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এর পর তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বজনরা পরিচিতদের বাসায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনো হদিস পাননি।
পরে জানা যায়, সেদিন বিকেলে মমতা গফুর হাজির মার্কেটে তাঁর পরিচিত জনৈক আবুল কাশেম নামের এক লোকের মাধ্যমে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। খবর পেয়ে তাঁর ভাই আবদুল কাদির খান মমতাকে বাসায় নিয়ে আসতে চাইলে তিনি তাতে রাজি হননি। পরে আবুল কাশেম মমতার ভাই কাদিরকে পরামর্শ দেন যেন তিনি বাসা থেকে তাঁদের আরো দুই ভাইকে নিয়ে আসেন। সে অনুযায়ী, কাদির বাসা থেকে দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গফুর হাজি মার্কেটে গিয়ে দেখেন মমতা ও তাঁর সন্তানদের কেউ নেই।
কাশেম জানান, মমতা স্বামীর বাড়িতে চলে গেছেন। তবে স্বামীর বাড়ি গিয়েও মমতাকে পাওয়া যায়নি।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে মমতা ও তাঁর তিন মেয়েকে না পেয়ে গত ২ নভেম্বর নরসিংদী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁর ভাই আবদুল কাদির। উদ্ধারকাজে মডেল থানা পুলিশ ব্যর্থ হলে গত ৪ নভেম্বর জেলা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল গাফফারকে উদ্ধারকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আবদুল গাফফার বলেন বলেন, ‘নিখোঁজ চারজনকেই আমরা জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা করছি। মমতার স্বামী ও তাঁর ভাইদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নিখোঁজদের বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে সাধারচরের আবুল কাশেমের রহস্যজনক উধাও হওয়া ও বিভিন্ন জেলায় অবস্থান নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধছে। তাঁকে ধরতে অভিযান চলছে। আশা করি, তাঁকে ধরলে আসল রহস্য বের হবে।’
এসআই আরো জানান, ২ নভেম্বর রাতে কাশেম ফরিদপুরে গিয়েছিল বলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পেরেছে পুলিশ।
মমতার ভাই আবদুল কাদির খান বলেন, ‘আমরা পুলিশের কাছে বারবার যাচ্ছি, তাদের খোঁজে বের করার জন্য। আমরা সবাই টেনশন করছি। আমরা তাদের জীবিত ফেরত চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি বড় আকার ধারণ করেছে। তাই পরিবারকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পুলিশ নিখোঁজদের পরিণতি নিয়ে সন্দিহান। নিখোঁজদের পতিতালয়ে বিক্রি, বিদেশে পাচার কিংবা মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তদন্ত চালানো হচ্ছে।