প্রশ্ন ফাঁসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি অসাধু ব্যক্তিদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে এই জমজমাট বাণিজ্য। আইন প্রয়োগে শিথিলতাই এর জন্য দায়ী বলেও মনে করে সংস্থাটি।
পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণ ও প্রতিকার চিহ্নিত করতে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি—এই চার স্তরের চার বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রায় ছয় মাস গবেষণা করেছে টিআইবি।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৯ সালে প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। গবেষণায় দেখা যায়, গত চার বছরে এই চারটি পাবলিক পরীক্ষায় ৬৩টি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা উদ্বেগজনক। এতে বলা হয়, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণ—এই তিনটি পর্যায়ের ৪০টি ধাপের মধ্যে ১৯টি ধাপে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকে, যা কাজে লাগাচ্ছে সিন্ডিকেট।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই যে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি কিন্তু একটা বড় ধরনের গ্রোথ ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে। একটা ব্যবসার মতো বিরাট বিষয়। তো, সেখানে বেশকিছু ভাগীদার রয়েছে। ভাগীদার দুই ধরনের—সরকারি পর্যায়ে ও বেসরকারি পর্যায়ে। আমরা যেটা বিশেষভাবে বলেছি যে সরকারি পর্যায়ের ভাগীদারদের অংশগ্রহণ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস হওয়া সম্ভব না। এই জিনিসটা পরিষ্কার করে আমরা বলতে চাই।’
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ১২টি কারণ তুলে ধরে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন প্রয়োগে শিথিলতাই উৎসাহিত করছে অপরাধীদের।
এ বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্দিষ্টভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধক আইন নেই। কিন্তু পরীক্ষায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে আইনের প্রভিশনগুলো আছে, সেখানে যে প্রভিশনগুলো আছে সেগুলোর কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ হয় না। অর্থাৎ এক ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হলো। কোচিং সেন্টার সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং যারা গাইড বইয়ের ব্যবসা করে, তারাও। কোচিং সেন্টার এবং গাইড বই হচ্ছে যে মূল মুনাফার ভাগীদার।’
দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ নয়, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতেই এ গবেষণা চালানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় টিআইবি।