স্যালাইন হাতে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা দিলেন মা
অ্যাম্বুলেন্সে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিলেন এক মা। আজ বুধবার পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী ওই মা পরীক্ষায় অংশ নেন।
অদম্য ওই মায়ের নাম রাজিয়া সুলতানা (২৬)। তিনি পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের ২০০৯-২০১০ বর্ষের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী।
রাজিয়ার স্বামী জেলা শহরের জালাসী এলাকার আবু আসাদ মোহাম্মদ আল আরিফ জানান, ২০১১ সালে দেবীগঞ্জ উপজেলার উত্তরপাড়া এলাকার রমজান আলীর মেয়ে রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরও রাজিয়া পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে থাকেন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁদের সংসারে প্রথম ছেলেসন্তানের জন্ম হয়।
আবু আসাদ মোহাম্মদ আল আরিফ বলেন, সন্তান হওয়ার পর রাজিয়া তাঁদের জানান, আজ বুধবার সকালে তাঁর বাংলা নাটক-২ বিষয়ের একটি পরীক্ষা আছে। এরপর বিরতি দিয়ে আরো তিনটি পরীক্ষা হবে। শারীরিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি যেকোনোভাবে হোক আজকের পরীক্ষা দিতে চান। পরিবারের অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে মানা করলেও রাজিয়া দমে যাননি। পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে রাজিয়ার প্রচণ্ড মানসিক ইচ্ছাশক্তি দেখে বিষয়টি কেন্দ্রপ্রধান পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কানাই লাল কুণ্ডুকে জানানো হয়। অধ্যক্ষ রাজিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন। এরপর আজ সকালে নবজাতককে রাজিয়া তাঁর ছোট বোনের কাছে রেখে অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষায় অংশ নেন।
আজ বেলা ১২টার দিকে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে যায়, কলেজ প্রাঙ্গণে একটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা। অ্যাম্বুলেন্সের বিছানায় বসে ছিলেন রাজিয়া। তাঁর ডান হাতে ছিল কলম। বাঁ হাতের শিরায় চলছিল স্যালাইন। সামনেই ছিল একটি টুল। সেখানে পরীক্ষার খাতা রেখে একমনে লিখছিলেন প্রশ্নের উত্তর। সামনে বসেছিলেন পরীক্ষক।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘গর্ভে সন্তান নিয়ে সব পরীক্ষা দিয়েছি। মা হওয়ার আনন্দের কারণে শারীরিক কষ্ট ছিল না। তাই পরীক্ষা মিস করতে চাইনি।’
পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান এহতেশামুল হক ও পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কানাই লাল কুণ্ডু অ্যাম্বুলেন্সে বসে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।