পাহাড়ে ঘরবাড়ি, জমি, বাগানে হামলার অভিযোগ
পাহাড়ে চাঁদাবাজিতে আবারো অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি। পাহাড়ি কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নানা কর্মকাণ্ড স্থানীয় বাঙালি অধিবাসীদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এসব এলাকার স্থানীয় লোকজন রাত-দিন পাহারা দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না তাঁদের সহায়সম্বল। প্রশাসন বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন জটিলতা নিষ্পত্তি করতে কাজ শুরু করেছে। আর শান্ত পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
খাগড়াছড়ির নতুন উপজেলা গুইমারা বাজারে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। রাত-দিন পাহারা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা চলছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, ফলের বাগান ও ধানক্ষেত। প্রতি শতক ফসলি জমির ওপর চাঁদার পরিমাণ এক হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা দাবি করেছে সন্ত্রাসীরা।
আর পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে পাহাড়ি সংগঠনগুলো। এ ছাড়া বাঙালি পরিবারগুলোকে এলাকাছাড়া, গভীর রাতে ঘরে আগুন দেওয়া, লুটপাট-চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগী এক বাঙালি বলেন, ‘তাঁরা এতদিন প্রতি কানি জমির জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা করে চান্দা চাইত। এখন চার হাজার টাকা করে চাইতেছে। আমরা এইটা মানি নাই। এই কারণে আমাদের ঘরবাড়ি যেগুলো ছিল, পোড়াই দেছে। গাছপালা, বাগান কাইটে দেছে। আমাদের তারা হুমকি দিচ্ছে, যাতে আমরা আর এই দিকে না থাকি।’
আরেকজন বলেন, ‘ইউপিডিএফ বা জেএসএস সন্ত্রাসী দল, এরা আমাদের চাষবাস করতে দেয় না। আমরা দুই-এক কানি কচুক্ষেত, সবজি আবাদ করি, ওরা অনেক টাকা চান্দা নেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাইতেছি যে ঘরদোর বাইন্ধে থাকি। আমার বাবা-মাকে সরকার জায়গা দিছে ১৯৮৩ সালে।’
জেলা প্রশাসন বলছে, পার্বত্য এলাকার ভূমি জরিপ পূর্ণতা না পাওয়ায় ভূমি নিয়ে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালের দিকে এই খাসজমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই এলাকার জরিপ ১৯১৭ ও ১৯৬৭ সালে হয়, এ দুটি জরিপের মাধ্যমেও কাগজ তৈরি হলেও তা পূর্ণতা পায়নি। এই খসড়া ম্যাপের ভিত্তিতে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে জমির চৌহদ্দি বের করা যায়নি। এ কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ভূমি কমিশন গঠন করে দিয়েছে, শিগগিরই ভূমিবিষয়ক সমস্যা করা হবে।’
আর ভূমি কমিশন কাজ শুরু না করা পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভূমি সমস্যার জন্য সরকার ভূমি কমিশন গঠন করেছে। কমিশন কাজ না করা পর্যন্ত এ সমস্যা থেকে যাবে।’
কয়েক দিন ধরে সন্ত্রাসীদের হামলায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। পার্বত্য জেলায় অশান্ত সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার। তবে অশান্ত এলাকাগুলোতে স্থায়ী সেনাক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান নিরীহ অধিবাসীরা।