লক্ষ্মীপুরে এ্যানীর বাড়িতে আ. লীগের হামলা
কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর এ্যানীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগ। ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার সময় দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। আহত এক সাংবাদিককে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ মিছিল নিয়ে এ্যানীর বাড়িতে এ হামলা চালায়। এ সময় এ্যানীর বসতবাড়ি বশির ভিলার দুটি দরজা ভাঙচুর করে। এ ছাড়া বসতবাড়ির সামনে একটি টিনশেড ঘর ভাঙচুর এবং আশপাশে ঝুলানো বেশ কিছু ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে তারা।
ওই মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন। হামলার সময় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এ্যানীর বাড়ির ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তাঁদের ধাওয়া করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ও স্থানীয়রা জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার পর লক্ষ্মীপুরে আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। মিছিলটি লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনি থেকে শুরু করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি একপর্যায়ে সাবেক গো হাটা রোড গেলে উত্তেজিত কিছু নেতাকর্মী এ্যানীর বাড়িতে হামলা চালায়।
এ সময় ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার সময় মাছরাঙা টেলিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি শাকের মোহাম্মদ রাসেলকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। একই সময় অনলাইন জেটিভির জেলা প্রতিনিধি মো. রুবেলকে লাঞ্ছিত করে তাঁরও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক সহকর্মীদের রক্ষায় এগিয়ে গেলে সাংবাদিক আনিস কবিরকেও লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা।
এ সময় পুলিশ ও জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ভুলু ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল উত্তেজিত কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এর আগে রায়ের প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে গোডাউন রোড পৌঁছালে ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম মামুন, কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন ও যুবদল নেতা মুকুলসহ বেশ কয়েক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘রায়ের প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তাদের ওপর হামলা করে। পরে আমার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও করতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।’ তিনি এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে লক্ষ্মীপুরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সর্বত্র ছিল চাপা আতঙ্ক। এ সময় লক্ষ্মীপুর শহরে পুলিশ ও বিজিবি টহল জোরদার ছিল। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিল অতিরিক্ত পুলিশ।
এ্যানীর বাড়িতে হামলার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আজ দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।