৯ বছরেও চালু হয়নি ফেনী ট্রমা সেন্টার
নির্মাণকাজ শেষ ও প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার নয় বছরেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে স্থাপিত ফেনী ট্রমা সেন্টার চালু হয়নি। লোকবল নিয়োগ, বাজেট নিয়ে জটিলতা ও সংকট থাকায় ওই ট্রমা সেন্টারটি চালু করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এতে জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত লোকজনকে দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে জেলার মহিপালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ২০০৬ সালে ফেনী ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এক একর জায়গার ওপর ২০ শয্যার এ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ কেন্দ্র প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। কিন্তু ১৭ জন চিকিৎসক ও কর্মচারীর পদের মধ্যে দুজন নার্স ও একজন আয়া ছাড়া সব কটি পদ শূন্য আছে।
ট্রমা সেন্টারে যন্ত্রপাতি থাকলেও অযত্নে-অবহেলায় মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশাল তিনতলা ভবনে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ নেই। রাতের ট্রমা সেন্টার প্রাঙ্গণে বখাটে ও মাদকাসক্তদের আসর বসে। নিয়োগ পাওয়া তিন কর্মচারী নিজেদের ব্যক্তিগত খরচে সামান্য একটু বাতির ব্যবস্থা করেছেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তোবারক উল্লাহ চৌধুরী বায়েজিদ বলেন, ট্রমা সেন্টারটি চালু থাকলে আহত রোগীদের রক্তক্ষরণরোধসহ অনেক রোগীর অকাল পঙ্গুত্ববরণ ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যেত। কারণ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে কুমিল্লার আগ পযন্ত এবং পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থেকে আহত রোগীদের ফেনী সদর হাসপাতালে আনা হয়ে থাকে। ফেনী হাসপাতালের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
এ ব্যাপারে ফেনী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহম্মদ পাঠান বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারগুলো সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাস্তার পাশেই করা হয়েছে। ট্রমা সেন্টারটি বন্ধ থাকায় ফেনী সদর হাসপাতালে আমাদের রোগী নিয়ে যেতে হয়। রক্তক্ষরণ ও গুরুতর রোগীদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় মারাও যায়। মহাসড়ক থেকে সদর হাসপাতালের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। কিন্তু যেতে হয় যানজটের মধ্য দিয়ে।’
জেলার সিভিল সার্জন ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, ‘সরকার দুই কোটি টাকার বেশি খরচ করে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করেছে। ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই এর কাজ শেষ হয়। পরের বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা প্রশাসনিক অনুমোদন পাই। নিয়ম অনুযায়ী তিনজন কর্মকর্তা ও ১১ জন বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার কথা। তবে শূন্য পদে এখনো নিয়োগ হয়নি। দুজন নার্স এবং একজন আয়া এ মুহূর্তে আছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা চালু হয় সে ব্যবস্থা নেব।’
এ ব্যাপারে ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (স্বাস্থ্য) আমি একজন সদস্য। সে জন্য এর দায়িত্বও আমি এড়াতে পারি না। এটা ২০০৬ সালে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখানে লোকবলের সংকট আছে, বাজেটের ঘাটতি আছে। সব মিলিয়ে একটু সমস্যার মধ্যে আছে। আমরা চাই স্বল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’