মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে শুরায়ী নেজামের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের শেষ ধাপ। আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে তাবলিগ জামায়াতের মুরব্বি মাওলানা মো. জুবায়ের মোনাজাত শুরু করেন। এই দোয়া মোনাজাত শেষ হয় দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে।
মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখ লাখ মুসল্লির ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর। মোনাজাতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে মোনাজাত শুরু হয়। মোনাজাতে ইজতেমার কামিয়াবি, অংশগ্রহণকারীসহ সব মুসলমানদের গুনাহ মাফ, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, বিশ্ব শান্তি, বিশ্ববাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
শুরায়ী নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, বুধবার বাদ ফজর ভারতের ব্যাঙ্গালোরর তাবলীগের শীর্ষ মুরুব্বি ফারুক সাহেবের বয়ানের মাধ্যমে শেষ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেন মুফতি আমানুল হক। এরপর হেদায়াতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান, তার বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এ বয়ানের পরে নসিয়ত মূলক বক্তব্য পেশ করবেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেউলা, তা বাংলায় অনুবাদ করছেন মাওলানা জুবায়ের।
গত তিন দিন কুয়াশা-শীত উপেক্ষা করে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ২২টি জেলা ও ঢাকা একাংশের মুসল্লিরা ময়দানে উপস্থিত হয়। তবে প্রথম ধাপের তুলনার মুসল্লি সংখ্যা কম ছিল। ৪০টি খিত্তায় অবস্থান নিয়ে তাবলীগ বিষয়ে মুরুব্বিদের দিকনির্দেশনা শুনেন তারা।
এদিকে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে আজ ভোর থেকে দলে দলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ ময়দানে আসতে থাকেন। ফলে আবার কানায় কানায় ভরে ওঠে ইজতেমা ময়দান। মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ১১টি বিশেষ ট্রেনসহ বিআরটিসি বাস সেবা চালু ছিল।
গত সোমবার (৩ ফেরুয়ারি) থেকে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা শুরু হয়। এর আগে ৩০ জানুয়ারি থকে ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের ইজতেমা সম্পন্ন হয়। সেখানে ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা অংশ নেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় এ পর্যন্ত বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে বেশ কয়েকজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের মুরুব্বী মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে, যা চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের শর্ত সাপেক্ষে সাদপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। শর্ত হলো আগামী বছর থেকে তাদের বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলিগি কার্যক্রম টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে করতে পারবেন না। তাবলিগ জামাতের মুরব্বী মো. জুবায়ের অনুসারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের ঘটনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।