টঙ্গীতে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে মা

গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই শিশু সন্তানকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন মা সালেহা বেগম। সালেহা বেগমের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে এতথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত শিশু দুটি হলো মালিহা আক্তার (৬) ও মো. আবদুল্লাহ (৪)। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরের পর থেকে বিকেলের মধ্যে যে কোনো এক সময়। মধ্যরাতে নিজেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেন সালেহা বেগম।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাহিদ হাসান।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) টঙ্গীর আরিচপুর জামাইবাজার এলাকার সেতু ভিলা নামের একটি আটতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা একটি বঁটিও উদ্ধার করা হয়।
নিহত দুই শিশুর বাবা আবদুল বাতেন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবারসহ গাজীপুরে বসবাস করছিলেন। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ঘটনার সময় তার নানাবাড়িতে ছিল।
পুলিশ জানায়, ফ্ল্যাটটির আশপাশে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সময় ফ্ল্যাটে শুধু মা সালেহা বেগমই ছিলেন। ঘটনার পর তিনি নিজেই পাশের ভবন থেকে তার দুই দেবরকে ডেকে আনেন। তখন তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এ সময় তার হাতে কাটা দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মধ্যরাতে সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেন সালেহা বেগম। তবে কেন বা কী কারণে তিনি এ কাজ করলেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দেননি।
সালেহা বেগমের স্বজনরা পুলিশকে জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের দেওয়া তথ্য মতে, শুক্রবার দুপুরে পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে খাবার খাওয়ার পর মা সালেহা বেগম ঘুমাতে যান, দাদি ওপরতলার ফ্ল্যাটে বেড়াতে যান এবং বাবা বাইরে যান। কিছু সময় পর দরজা খোলা দেখে সালেহা বেগম নিজেই দুই শিশুর রক্তাক্ত লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানান। তার চিৎকারে দাদি ও আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ শিশুদের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাহিদ হাসান বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা চেষ্টা করছি হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল কারণ উদঘাটন করতে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”