দলবল দেখে আমরা আদেশ দিই না : প্রধান বিচারপতি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগ সর্বসম্মত হয়ে বহাল রাখার যে আদেশ দিয়েছেন, তার সংক্ষিপ্ত কপি চেয়ে করা আবেদনের সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীর বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
আজ বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখার আদেশ দেন। আদালতে আদেশের সংক্ষিপ্ত কপি চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে দেন।
তখন এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি তো একা এসেছি। দলবল নিয়ে আসিনি।’
জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এটা কেমন কথা? দলবল নিয়ে এলেই কি আমরা আদেশ দিয়ে দিই? দলবল দেখে আমরা আদেশ দিই না।’
এ সময় বেঞ্চের অপর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এ জে মোহাম্মদ আলীর মন্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি গুরুতর আপত্তিকর কথা বলেছেন। আপনি আমাদের ফোর্স করতে পারেন না। আপনারা ভুলে যান যে কোর্টে আপনারা আইনজীবী। অফিসার অব দ্য কোর্ট। কোনো দলের লোক নন।’
আজকের আদেশে একই সঙ্গে আদালত আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এই মামলায় জামিন পেলেও আরো অন্তত ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় এখনি তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না।
সকালে আদেশ দেওয়ার ঘণ্টা দুই পরে বেলা ১১টার দিকে আপিল বিভাগে সংক্ষিপ্ত কপি চেয়ে আবেদন করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের সংক্ষিপ্ত আদেশ চাচ্ছি। বেল বন্ড দাখিল করার জন্য সংক্ষিপ্ত আদেশ দরকার। আপনাদের আজকের রায় পত্র-পত্রিকায়, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। হয়তো আপনাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। আমাদের দিতে অসুবিধা নেই।’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়া তো আরো কয়েকটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট আছেন। তা ছাড়া আপিল বিভাগ থেকে এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেওয়ার নজির নেই।’
তখন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘এ ধরনের শর্ট অর্ডার দেওয়ার নজির নেই।’
তখন প্রধান বিচারপতি খালেদা জিয়ার আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনার আবেদন রিফিউজ (নাকচ) করা হলো।’
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগের রুলসে শর্ট অর্ডার দেওয়ার বিধান আছে।’
বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী প্রশ্ন করেন, ‘হাইকোর্টের বিধান কি আমাদের জন্য মানা বাধ্যতামূলক?’
জবাবে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি তা বলছি না। আপনারা চাইলে তা দিতে পারেন।’
প্রধান বিচারপতি আবার বলেন, ‘আপনার আবেদন রিফিউজ (নাকচ) করা হলো।’
আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি তো একা এসেছি। দলবল নিয়ে আসেনি।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা কেমন কথা? দলবল নিয়ে এলেই কি আমরা আদেশ দিয়ে দিই? দলবল দেখে আমরা আদেশ দিই না।’
তখন বেঞ্চের অপর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর মন্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি গুরুতর আপত্তিকর কথা বলেছেন। আপনি আমাদের ফোর্স করতে পারেন না। আপনারা ভুলে যান যে কোর্টে আপনারা আইনজীবী। অফিসার অব দ্য কোর্ট। কোনো দলের লোক নন।’
তখন এ জে মোহাম্মদ আলী তাঁর মন্তব্যের জন্য আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
একপর্যায়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যেখানে নাকচ করে দিয়েছেন, সেখানে আপনি তর্ক করছেন কেন?’
শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আবেদন আমরা বিবেচনা করতে পারলাম না। বিবেচনা করার সুযোগ নেই।’