‘কাজ নাই, খাবার নাই’
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়ে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ না পৌঁছায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে বানভাসিরা। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও সদর উপজেলার ৬৬ ইউনিয়নের ছয় শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি জীবনযাপন করছে প্রায় ছয় লাখ মানুষ। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের জাহেরা বেগম বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ থেকে বাঁধে ধাপরী তুলে আছি। কাজ নাই, খাবার নাই। সরকার কোনো সাহায্য দেয় না। খুব দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের কৃষক শামছুল হক বলেন, ‘গত ১৫ দিন আগের বন্যার পানি নামতে না নামতেই আবারও বন্যা শুরু হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। গত বন্যায় আমার এক একর জমির ক্ষেত তলিয়ে গেলেও এবার এক একরসহ বাকি ৪০ শতকের ক্ষেতও তলিয়ে গেছে। পানি নামার লক্ষণ নাই। আমাদের কৃষকদের আর বাঁচার উপায় নাই।’
জেলার নয় উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমির আমনক্ষেত বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত থাকলেও সঠিক হিসাব নিরূপণ না করে ১৫ দিন আগে নিমজ্জিত ফসলের হিসাব, সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন দপ্তরের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শওকত আলী সরকার।
শওকত আলী জানান, ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। তার মধ্যে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যার সময় বৃক্ষমেলার বিষয়টি জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘সমস্যা কী। সরকারি বরাদ্দ এসেছে তাই বৃক্ষমেলা করা হচ্ছে। শহরে তো আর বন্যা নেই। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তো গাছের চারা দেওয়া হচ্ছে। বন্যার সময় বৃক্ষমেলা করলে তাতে সাংবাদিকদের সমস্যা কোথায়।’
এদিকে নিম্নাঞ্চলের ১৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার জানান, জেলার ১৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার্তদের জন্য ২৫০ টন চাল ও ছয় লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ বানভাসির ভাগ্যে জোটেনি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, নতুন করে ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই বিতরণ করা হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি আট সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি পাঁচ সেন্টিমিটার হ্রাস পেলেও বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি আট সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।