সরকার জনগণকে ভয় পায় : মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী, জনগণই এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাবে। জনগণ এই স্বৈরাচারী সরকারের একদলীয় বাকশালী শাসন আর মেনে নেবে না।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের ওপর কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বৈরাচার। তারা হিটলার ও গোয়েবলসের মতো মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। আজকে বাংলাদেশেও যারা ফ্যাসিবাদের দোসর, তাদের রেহাই হবে না। এই স্বৈরাচার সরকারের কবল থেকে জনগণ মুক্তি চায়। যে কারণে সরকারও জনগণকে ভয় পায়। আর জনগণের নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার ভয় পায়। এ জন্যই তাঁকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এভাবে সরকার আবারও ফ্যাসিবাদী শাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ বারবার প্রতারিত হতে চায় না। সময় আসছে, জনগণই স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাবে। এই সরকারের পতনের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়া হবে। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করছি। তাদের পাশে থাকব।’
মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, একটি স্বাধীন দেশের আদালতে একজন সম্পাদকের ওপর হামলা হবে, এটা কল্পনাও করা যায়নি। সরকারি দলের লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছে। মনে হয়, পুলিশ তাদের হামলা করার সুযোগ করে দিয়েছিল। তা না হলে পুলিশ হামলার সময় দূরে অবস্থান নিয়েছিল কেন? আজকে শুধু মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা নয়, এটা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ওপর হামলা। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা। আসলে তিনি মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করছেন। এ জন্যই হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়।
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকারের পরিকল্পনায় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা হয়েছে। আর তারা এখন বলছে, যে হামলা করেনি। তাহলে হামলা করল কে? আসলে সরকার নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ব্লেম গেম খেলছে। এখন পর্যন্ত তারা একজন আক্রমণকারী সন্ত্রাসীকেও আটক করতে পারেনি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচিতে দলের পক্ষে সংহতি জানিয়ে বলেন, মাহমুদুর রহমান বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যর্থতার বিরুদ্ধে, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এ জন্যই তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। আজকে সময় এসেছে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামতে হবে। মাহমুদুর রহমানের রক্তমাখা লাল শার্ট লজ্জিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ বলেন, ‘মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করবে। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। আজকে মাহমুদুর রহমানের ওপর শুধু নয়, যে কারো ওপরই হামলা হতে পারে। এমতাবস্থায় ইমানি দায়িত্ব নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে শরিক হতে হবে।’
বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি কুষ্টিয়ায় পুলিশের এসপিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। তিনি তো কথা শোনেননি। তাঁর বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? ওবায়দুল কাদের কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? সবাই বলছে, হামলা করেনি। তাহলে হামলা করল কে? অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে আমাদের বৃহত্তর কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সহসভাপতি শাহীন হাসনাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, দিগন্ত টিভির ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএফইউজের সহসভাপতি নূরুল আমিন, কৃষিবিদ নেতা ও বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ। কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতা ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।