টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে এবার প্রতিবন্ধী তরুণীকে গণধর্ষণ
টাঙ্গাইলে চলন্তবাসে এবার এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার ভুয়াপুর উপজেলার ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনের কাছে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
পরে আজ শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা করেন ডা. রেহেনা পারভীন। ওই তরুণী তাঁর নাম ও জেলার নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারেন না।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে সবাই বাস থেকে নেমে গেলে সুযোগ বুঝে মেয়েটিকে গণধর্ষণ করেন বাসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার। পরে ওই নারীর চিৎকার শুনে এক নৈশপ্রহরী পুলিশকে জানালে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে এবং বাসের হেলপার নাজমুলকে আটক করে।
নাজমুল তরুণীকে ধর্ষণ করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। পুলিশ তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তারের জন্যে পুলিশের অভিযান চলছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশাররফ হোসেন জানান, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাঈদ নূরে আলম বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ফোর্সসহ জরুরি ডিউটি করছিলেন। রাত ১১টার পরে ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনের কাছে জায়গায় যাওয়ার সময় এক নৈশপ্রহরী তাঁকে জানান যে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো একটা বাসে এক মেয়ের কান্নাকাটি শুনতে পেয়েছেন। তারপরে এসআই নূরে আলম সেখানে গিয়ে বাসের মধ্যে ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তরুণী শুধু নাম বলতে পারেন, আর কিছু বলতে পারেন না। তাঁর কান্নাজড়িত কণ্ঠ ছিলো। তারপরে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারের খোঁজ করা হয়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হেলপারকে খুঁজে পেয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হেলপার জানান যে তাঁর চালক একটু আগে বাসে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। তারপরে এসআই নূরে আলম বাসচালক ও সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেন। না পেয়ে তারপরে মেয়েটিকে থানায় নিয়ে এসে এসআই নূরে আলম নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা শেষে আসামি নাজমুলকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
আইনজীবী এস আকবর খান বলেন, মেয়েটি প্রতিবন্ধী, কথা বলতে পারেন না। কাল থেকে তাঁর অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। তখন থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেয়েটির বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তাঁকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে ডাক্তারী পরীক্ষায় সেই আলামত মিলেছে।
আকবর খান বলেন, এখন এই ধরনের ঘটনা যদি পর্যায়ক্রমে ঘটতে থাকে, যেখানে বাসে মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে চলাচল করবে, সেই বাসের পরিচালক, ড্রাইভার, হেলপার, কন্ডাক্টর যদি ধর্ষণ করে তাহলে মেয়েরা চলবে কিভাবে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মানসিকভাবে কিছুটা ডিস্টার্ব মেয়েটি গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় আমাদের জরুরি বিভাগে আসে। এবং সোয়া ২টায় সে ভর্তি হয়। শারীরিক পরীক্ষা শেষে আমাদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে।’
এর আগে গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে কলেজছাত্রী রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। ছোঁয়া পরিবহনের বাসেই রূপাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশমাইল এলাকায় বনের মধ্যে তাঁর মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় নারী হিসেবে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।
পরের দিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্তানে দাফন করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তাঁর ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে তাঁকে শনাক্ত করেন। ওই ঘটনায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি আদালত চার আসামির মৃত্যুদণ্ড ও একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— ছোঁয়া পরিবহনের বাসচালক হাবিবুর রহমান (৪৫), চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (২০)। এ ছাড়া বাসের সুপারভাইজার সফর আলী ওরফে গেদু মিয়াকে (৫৫) সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি যে বাসে রূপাকে ধর্ষণ করা হয় সেই বাসটির মালিকানা পরিবর্তন করে রূপার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।