মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক না রাখায় হতাশ : মোশাররফ
কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক না রাখায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজ রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মোশাররফ বলেন, ‘ব্যক্তিগত চিকিৎসক না রেখে যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তাতে আমরা হতাশ হয়েছি। এ বোর্ডের পরামর্শে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হবে না। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দল রাখবেন বোর্ডে। কিন্তু তাদের রাখা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলকে দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে। তিনিও আমাদের যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটি করা হয়নি।’
গতকাল শনিবার কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
এ ছাড়া বিএনপি নেতা বলেন, তাঁর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জাতিসংঘ সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রী উৎকণ্ঠায় আছেন। সে জন্য তিনি বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি মোশাররফ বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব জাতিসংঘে গেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) গেছেন। নিশ্চয় সেটি কোনো না কোনোভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আঘাত করেছে। হয়তো এটি তাঁর হতাশা, উৎকণ্ঠার কারণ হয়েছে। তাই তিনি এ ধরনের কথা বলেছেন।’
জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী গত বছরে বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে। এখন আমরা অত্যন্ত খুশি ও আশাবাদী; বিএনপি ও ২০ দলের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি আমাদের দাবির সঙ্গে একমত। এটি এখন আমাদের শুধু না, জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
জামায়াত ছাড়া বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য করতে হবে—যুক্তফ্রন্টের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এ কথা আমরা এখনো শুনিনি, আর তারা গতকাল যে দফা দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা এখনো আলোচনা করিনি। আগে সেগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে বসব, আলোচনা করব, তার পরে এটি নিয়ে মন্তব্য করব।’
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবেন কি না জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এ সদস্য বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কখনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।’
মোশাররফ বলেন, ‘গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত তিন হাজারের অধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে দুই লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে। আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীকে। সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মৃত ও দেশে না থাকলেও রাজনৈতিক কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মৃত ব্যক্তিদের পুলিশ নাশকতা ও গোপন বৈঠক করতে দেখেছে। মূলত নির্বাচন থেকে বিএনপিকে বাইরে রাখতেই সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।