খুলনার বাজারে দেশি গরু, ক্রেতা-বিক্রেতা স্বস্তিতে
অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় ভারত থেকে এ বছর গরু আসছে কম। তাই বলে খুলনা জেলার বড় হাটগুলোতে দেশি গরুর আমদানির কমতি নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, এবার বাজারে বেশি দামের আশায় দেশি গরুর আমদানি বেড়েছে। আবার অনেক ক্রেতা ভারতীয় গরু আসবে এবং দাম কমে যাবে এই আশায় এখনই গরু কিনছেন না।
খুলনা মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ২৭টি পশুর হাট বসেছে। হাটে গরু আসছে আর বিক্রেতারা আশা করছেন খুব দ্রুতই জমে ওঠবে বাজার।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া পশুর হাটটি যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। এই পশুর হাটটি খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা মধ্যবর্তী স্থানে। সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে আসা গরু এই হাট হয়ে, ঢাকা, বরিশাল, বরগুনা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি কম, তবে দেশি গরু ও ছাগলের আমদানি ভালোই বলা যায়। হাটে পশুর জায়গা হচ্ছে না। পশু রাখা হয়েছে দুই রাস্তার পাশে এমনকি পাশের ফসলের মাঠেও।
১৮ মাইল এলাকার শফি মোল্লা নিজের বাড়িতে পালন করা ১৬টি গরু এনেছিলেন। এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে আটটা। তিনি জানালেন, বাকিগুলোর দরদাম চলছে। তিনি বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার দাম একটু বেশি কিন্তু গো-খাদ্যের হিসাব করলে এই দামে লোকসান হয়ে যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে আটটি গরুর বিক্রি হয়েছে এগুলোর দাম প্রতিটি ৬০ হাজার টাকারও বেশি পড়েছে। বর্তমানে যে আটটি আছে এগুলোর প্রতিটির দাম এক লাখের বেশি করে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘গরু লালন-পালন করে খরচ উঠে না। তবে কোরবানির সময় বিক্রি করলে নগদ টাকা পাওয়া যায় ,তাই লাভ । নগদ অর্থ দিয়ে কিছু একটা করা যায়।’
বরগুনা থেকে আসা গরুর ব্যাপারী ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গরু আমদানি কমেনি। আমাদের এলাকার চেয়ে এখানে দামও কম।’ ছিদ্দিকুর ট্রাকে করে গরু নিয়ে যাবেন। তিনি জানান, প্রতিবছর এখান থেকে গরু কিনে নিয়ে যান। এবারও এসেছেন। ভারতীয় গরু কম আসায় গরু সংকট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। তবে তাঁর ধারণা এবার মধ্যবিত্ত লোকজন কোরবানি কম দেবে।
খুলনা শিল্প বণিক সমিতির সাবেক পরিচালক রকিবুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘পশুর বাজার ভালো। মাঝারি সাইজের গরুর দাম একটু বেশি। সেই তুলনায় বড় গরুর দাম কম বলে মনে হয়। সাধারণ ক্রেতারা এখনো বাজারে প্রবেশ করেনি।’
খর্নিয়া পশুর হাটে মেডিকেল দল বসানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে। দেশি-বিদেশি গরু হঠাৎ করে কোনো রোগে আক্রান্ত হলে ওই দলের সদস্যরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। একইভাবে গরুকে অবৈধভাবে মোটাতাজা করা হচ্ছে কি না তাও পরীক্ষা করে দেখছেন।
খর্নিয়া পশু হাটের ইজারাদার শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতাদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। যাতে কেউ প্রতারিত হতে না পারে।’
খর্নিয়া পশু হাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ডুমুরিয়া থানার উপপরিদর্শক লিটন মল্লিক বলেন, ‘ব্যাপারী, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সব রকম নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। সাদা পোশাকেও আছে গোয়েন্দা পুলিশ।’
খুলনা জেলা ও মহানগরী মিলে মোট ২৭টি পশুর হাটের অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকেল থেকে খুলনা সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা জোড়াগেট পশুর হাট উদ্বোধন করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি।
এ সময় সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এবারও নগরবাসী হাটে নির্বিঘ্নে পশু ক্রয় করতে পারবেন।’ তিনি হাট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেবামূলক মনোভাব নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
জোড়াগেট পশুর হাটে পশু এলেও আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। এই হাটে আসা যশোরের মনিরামপুর থেকে আসা ইলিয়াস হোসেন জানান, খুলনায় মূলত বুধবার দুপুর থেকে হাট জমে উঠবে বলে তাঁদের ধারণা। কারণ শহরে গরু রাখার সমস্যা থাকায় সবাই শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা করতে পছন্দ করে।
এদিকে জোড়াগেট পশুর হাট কেন্দ্র করে তার আশপাশে গো-খাদ্য আর ছুরি, চাকুর অস্থায়ী বাজার বসেছে। যারা গরু কিনছে তারা দুইদিনের গরুর খাবারও নিয়ে যাচ্ছে।
খুলনার প্রবীণ কসাই মুন্না বলেন, ‘এবার ভারতীয় গরু না এলে আগামীতে এ দেশের কৃষকদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়াবে। কৃষকরা সবাই অধিক হারে পশু লালন ও পালন শুরু করবে। ফলে দেশ আগের মতো পশু লালন ও পালন করে স্বনির্ভর হবে- যা দেশের জন্য কল্যাণকর।’