নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যানপ্রার্থী মো. জামিল হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার (১৫ মে) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

অশোক কুমার বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ করায় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জামিল হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে কমিশন। প্রার্থীর শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত দেয়। গত ১৩ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা অধিশাখা-২ এর উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জামিল হাসানকে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়।

জামিল হাসান দুর্জয় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলীর ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার ছোট বোন রুমানা আলী টুসি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, জামিল হাসান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিলের দিন থেকে বিভিন্ন সময়ে কবে কোথায় আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন। এসব ঘটনায় তার বা তার কর্মীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা না করে আচরণবিধি ভাঙছেন। নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে জামিল হাসানকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়, ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আপনি ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী। আপনি ২১ এপ্রিল শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ও চত্বরের বাইরে আনুমানিক বেলা ১১টা ১০ মিনিটের সময় আপনার কর্মী সমর্থকগণ শোভাযাত্রা/শোডাউনসহ মিছিল করেন এবং এতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় আপনাকে ২১ এপ্রিল কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলে আপনি নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারপূর্বক ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৪০ হাজার টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তীতে আপনি ২৭ এপ্রিল বিকাল ৫টার সময়ে গাজীপুর সদর উপজেলাধীন বাঘের বাজার এলাকাস্থ সারাহ গার্ডেনে প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে আনুমানিক ৪০০ কর্মী-সমর্থক নিয়ে জনসভা করার চেষ্টা করেন। উক্ত বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসতিয়াক মজনুন ইশতি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৫ ও ৭ লঙ্ঘনের দায়ে আপনার উপস্থিতিতে আপনার সমর্থক মো. আক্তার হোসেনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯ অনুসারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর মানুষকে ভুরিভোজ করানোর উদ্যোগ নিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় ইসির চিঠিতে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি (জামিল হাসান) ৭ মে আনুমানিক বেলা ১২টার সময় আনুমানিক এক হাজার কর্মী সমর্থক নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটের সামনে উত্তর দিকে মসজিদ মার্কেট এলাকায় বিশাল প্যান্ডেল করে বিনা অনুমতিতে জনসভাসহ দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। যা উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৭(খ), ৭(গ) এবং ১৭(খ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও শ্রীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাইখা সুলতানা কর্তৃক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তীতে শ্রীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাইখা সুলতানা পুনরায় একই স্থানে বিনা অনুমতিতে সভা আয়োজন এবং জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগপ্রাপ্ত হন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়োজন স্থলে আপনাকে বক্তৃতারত অবস্থায় এবং আপনার প্রায় এক হাজার কর্মী সমর্থকসহ দেখতে পান। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ৭(খ), ৭(গ) এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৪ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হলে আপনি (জামিল হাসান দুর্জয়) এবং আপনার সমর্থকসহ সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদানসহ হমকি প্রদান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে আপনিসহ আপনার কর্মী-সমর্থকগণ হুমকি প্রদানসহ অশোভন আচরণ করে মিছিল করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে দেখেন, যা উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৭, বিধি ১১. বিধি ১৮ এর সুস্পষ্ট লংঘন।

চিঠিতে উল্লেখিত কার্যাবলীর বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ‘উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০১৪ এর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এ বর্ণিত বিভিন্ন বিধি ভঙ্গ করছেন। আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ এ বিধিমালায় বর্ণিত দণ্ড প্রদান করার পরও নির্বাচনি আচরণ মেনে চলছেন না, যা একটি সুষ্ঠু সুন্দর, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্তরায়।’