রাজবাড়ীর সেই বৃদ্ধা চলে গেলেন না ফেরার দেশে
দীর্ঘ ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রাজবাড়ীর সেই বৃদ্ধা রাজিয়া বেগম বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নিঃসন্তান এই হতদরিদ্র মাকে সুস্থ করতে পুলিশ বিভাগের সদস্যরা রক্ত ও অর্থ দিয়ে শত চেষ্টা করলেও তাঁদের সেসব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
গত ৩ অক্টোবর শনিবার দুপুরে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে রাজিয়া বেগমের খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসা সহায়তায় জন্য অর্থসহায়তা দেন। বৃদ্ধার শরীরে আরো রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় তাৎক্ষণিক কালুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এনে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা নেন। একই সঙ্গে তাঁর শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত ও আরো অর্থ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে অসুস্থ ওই বৃদ্ধা ও এক পুলিশ সদস্যের রক্ত দেওয়া নিয়ে এনটিভি অনলাইনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ‘আমি শুধু পুলিশ না, একজন মানুষও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন দেখে অনেকে বৃদ্ধার খোঁজখবর নেন এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে আশ্বাস দেন। সেই জন্য বৃদ্ধার নামের একটি বিকাশ নম্বর খোলা হয়। আহ্বান জানানো হয় ফেসবুকে। কিন্তু বিকাশে কোনো টাকা আসেনি।
এদিকে বৃদ্ধার শরীরে পাঁচ ব্যাগ রক্ত যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত রোববার দুপুরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু বৃদ্ধার রাজমিস্ত্রিী স্বামী ইউনুস মৃধার কাছে সেই টাকাও ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে মানিকগঞ্জের বরঙ্গাইল হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মো. আকরামুজ্জামান আকরাম, রাজবাড়ী ডিএসবির উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন, রাজবাড়ী সদর থানার এসআই ফরিদ আহমেদ, এসআই তারেকুজ্জামান তারেক, পাংশা থানার এসআই রক্তদাতা হাফিজুর রহমান হাফিজ, কালুখালী থানার রক্তদাতা এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, রাজবাড়ী পুলিশ লাইনসের পিএসআই রক্তদাতা জয়ন্ত কুমার মজুমদারকে বিষয়টি জানালে তাঁরা বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দেন।
রাজমিস্ত্রি ইউনুস মৃধা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে ফোন করে জানান, তাঁর স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হতে বলছেন। কিন্তু আইসিইউতে ভর্তি করার মতো টাকা তাঁদের নেই। আবার হাসপাতালের সরকারি আইসিইউও ফাঁকা নেই।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ইউনুস মৃধা আবার ফোন করে জানান, তাঁর স্ত্রী রাজিয়া আর বেঁচে নেই।
ওই দিনই ইউনুস মৃধা স্ত্রীর লাশ নিয়ে আসেন রাজবাড়ী পৌরসভার ধুনচি পোদ্দার পুকুরপাড় এলাকায়। আজ শুক্রবার সকালে স্থানীয় কবরস্থানে রাজিয়া বেগমকে দাফন করা হয়।
এদিকে বৃদ্ধার মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বৃদ্ধার রক্তের প্রয়োজনীয়তার কথা জানতে পেরে জেলায় কর্মরত এবি পজিটিভ রক্তের গ্রুপধারী পুলিশ সদস্যদের তৈরি থাকতে বলেছিলাম। অনেক সদস্য রক্ত দিয়েও ছিলেন। চিকিৎসার জন্য আরো টাকা দিতে চেয়েছিলাম। তার আগেই চলে গেলেন।