‘আমরা জানি কীভাবে উন্নয়ন করতে হয়’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/10/15/photo-1444906239.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেশের মানুষকে কোনো কিছু চাইতে হয় না, কোনো দাবি-দাওয়া জানাতে হয় না। আওয়ামী লীগ জানে জনগণের সমস্যা কোথায়, কীভাবে সমাধান করতে হয়। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা জানি কীভাবে উন্নয়ন করতে হয়।’
আজ বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ছিটমহল ও সমুদ্র সীমা নিয়ে যে সমস্যা ছিল তা আওয়ামী লীগ সরকার সমাধান করেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছিটমহল বলে যেসব স্থান চিহ্নিত ছিল, সেগুলো এখন বাংলাদেশের এলাকা। ওই এলাকার মানুষ এখন বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিয়ে চলতে পারবে। তাদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই এলাকার মানুষের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য আজও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেছি।’
এ সময় কুড়িগ্রামে বিভিন্ন ফসলের বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণসহ বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, কলেজ ভবন, হাসপাতাল ভবন, থানা ভবন, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন ইত্যাদি। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, নার্সিং হোস্টেলের নতুন ভবন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের নতুন ছাত্রাবাস, একই কলেজের ছাত্রী নিবাস, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের বিজ্ঞান ভবন, পৌর অডিটরিয়াম, জেলা স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এসব কাজ যেন ভালো ভাবে শেষ হয় সেজন্য স্থানীয় জনগণের সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, ছিটমহলগুলো আর ছিটমহল নাই। এগুলো এখন বাংলাদেশের অংশ। ওখানকার নাগরিকরা বাংলাদেশেরই নাগরিক। কাজেই তাদের এখন আপন করে নিবেন।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশকে দরিদ্র বলে ভবিষ্যতে কেউ আর অবহেলা করতে পারবে না। দারিদ্র্যের হার আমরা ২২.৪ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি। কুড়িগ্রামে সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে দেব। প্রত্যেক উপজেলায় একটা করে সরকারি স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে।’
কুড়িগ্রামে কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। নদী ড্রেজিং করে দেব, নাব্যতা ফিরিয়ে আনব। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেব যাতে আপনাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। ইতিমধ্যেই এর জন্য জায়গা চিহ্ণিত করতে ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছি। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আরেকটি ধরলা ব্রিজ নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। যেটা লালমনিরহাট ও ফুলবাড়ীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। সেটার কাজ ইতিমধ্যে আমরা শুরু করেছি। স্থলবন্দর চালু হয়েছে। দুধকুমার নদের ওপরও আরেকটি ব্রিজ তৈরি করে দেওয়া হবে। এই অঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন উন্নত হয় সেজন্য কুড়িগ্রামে আমরা রেলস্টেশন নির্মাণ করে রেল সংযোগের ব্যবস্থা করে দেব।শিশুপার্ক করে দেব। প্রত্যেক উপজেলায় খেলাধুলার জন্য মিনি স্টেডিয়াম করে দেব। কিন্তু এই স্টেডিয়াম কোনো স্কুল কলেজের খেলার মাঠে হবে না। সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় হবে যেন বারো মাস খেলাধুলা চলতে পারে।’
এই এলাকায় আর কখনো মঙ্গা হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার সব আমরা করব। ভবিষ্যতে কোনোদিন আর এ এলাকা মঙ্গা এলাকা থাকবে না। এই শব্দ মানুষ ভুলে যাবে। এখানে নদী ভাঙন হয়। যারা ভূমিহীন তাদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করা হবে। যাদের ভিটামাটি আছে কিন্তু ঘর করার টাকা নেই তাদের আমরা গ্রাম তহবিল থেকে ঘর করে দেব।’
নিজের বক্তব্যে দেশের বাজেট বৃদ্ধি করা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো, কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরিসহ স্বাস্থ্য খাতে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়নের যত রকমের কাজ দরকার তা আমরা করে যাচ্ছি। বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। যারা প্রবাসে যেতে চান তারাও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যেতে পারবেন। ভিটেমাটি বিক্রি করার দরকার পড়বে না। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ এখন একটু কাজ করলেই অর্থ উপার্জন করতে পারে। আমরা চাই দেশ আরো উন্নত হোক। দেশের মানুষের জীবন উন্নত হোক। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তাই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কিছু দাবি-দাওয়া জানানোর প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটা দেশকে উন্নত করতে হলে কী করতে হয় আওয়ামী লীগ তা জানে। আমরা সপ্তম পঞ্চ বার্ষিকীর পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। দেশকে উন্নত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। শুধু আপনাদের দোয়া চাই।’
২০১৩ সালে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সেসময় শত শত মানুষেকে পুড়িয়ে মেরেছে। মানুষের ক্ষতি করেছে। এরা মানুষ না, এরা জানোয়ার। এরা মানুষের কল্যাণ আনতে পারে না। বিএনপি জামায়াত জঙ্গিবাদ এনেছিল। খালেদা জিয়া দেড়শো মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। ছোট্ট শিশুও তাঁর হাত থকে রেহাই পায়নি। এখন তিনি বিদেশে গিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন। বিদেশিদের হত্যা করে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন।’
বাংলাদেশের সব মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে সেটাই চায় বর্তমান সরকার। এ জন্য সেভাবেই দেশকে উন্নত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
সবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নিজের বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।