চট্টগ্রামে মণ্ডপ বেশি দেখিয়ে বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ
উৎসবমুখর পরিবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা উদযাপনে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হলেও চট্টগ্রামে মণ্ডপের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। প্রশাসন বলছে, একই পূজা মণ্ডপের নাম বিভিন্ন স্থানে দেখিয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। যাচাই-বাছাই করার সুযোগ না থাকায় এমনটি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন তারা।
অপরদিকে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ এবার ৩২৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, এমন তালিকা দিয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সেই অনুযায়ী জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে মণ্ডপ প্রতি ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, নগরীর কোতোয়ালি থানার ১০৩টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে ২৫টি মণ্ডপের ঠিকানা দুই বার করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সদরঘাট থানার ১৮টি মণ্ডপের নাম আছে কোতোয়ালি থানার তালিকাতেও। একইভাবে ইপিজেড থানার দুটি মণ্ডপের নাম রয়েছে পাশের থানাতেও। খুলশী থানায় এলাকায় আটটি মণ্ডপে পূজা হলেও সেখানে আরো সাতটি মণ্ডপ বেশি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
একইভাবে আকবর শাহ, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, বায়েজিদ, চকবাজার, বাকলিয়া, কর্ণফুলী থানায় এলাকায় অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। আর এসব অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৫০ টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
এসব অনিয়মকে অত্যন্ত দুভার্গজনক এবং ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, সংগঠনের নিজস্ব তদন্ত কমিটি রয়েছে, প্রশাসন রয়েছে তাদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার। তদন্ত করে যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, ‘এটা এই জন্য প্রয়োজন যে, যদি আমরা এ প্রবণতাটাকে রুখতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে নানান জায়গায় পূজাকে কেন্দ্র করে এমন হবে।’
মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি বিদ্যালাল শীল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তালিকা তৈরি করেছি। ভুল থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। গত বছর কয়েকটি থানার পূজা মণ্ডপ নিয়ে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছিল। এবার তাও শোধরে আনা হয়েছে।’
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রত্নাকর দাশ বলেন, ‘গত বছর থানা দিয়ে ভাগ হয়েছে। এবার ৯০ ভাগ তালিকা সঠিক হয়েছে। আমাদের পূজার সংখ্যা ২৯৮টি। এবার জেলা প্রশাসক ২৬টি বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা অস্বীকার করতে পারব না। এ কারণে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়ে গেছে।’
রত্নাকর দাশ আরো বলেন, অনুদান আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে মহানগর কমিটি তার দায়িত্ব নেবে। কেউ যদি বলে পূজা কমিটি আমাদের অনুদান খেয়ে ফেলেছে সেই ক্ষেত্রেও মহানগর কমিটি দায়িত্ব নেবে। তবে ৩২ বছরে কেউ এ রকম অভিযোগ করতে পারেনি। পাবলিক থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। বিগত বছরগুলোতে অনিয়ম হলেও এবার তা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, মহানগরে পূজা মণ্ডপের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ না থাকায় অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছে। জেলার মধ্যে নির্বাহী কর্মকর্তরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। মহানগরের তালিকার ওপর নির্ভর করে অনুদান দেওয়া হয়। তবে পূজা মণ্ডপ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ এত দিন আসেনি। এখন থেকে এসব বিষয় যাচাই-বাচাই করে পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বিষয়টি আরো কঠোরভাবে দেখা হবে।
জেলা প্রশাসন প্রতিটি মণ্ডপকে ৫০০ কেজি করে চাল, সিটি করপোরেশনের মেয়র পাঁচ হাজার টাকা, স্থানীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আলাদাভাবে সরকারি সাহায্য ও ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে থাকেন।