‘পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/02/27/photo-1425015455.jpg)
বাংলাদেশের বর্তমান সংকট নিরসনে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা বা সংলাপের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইপি)। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন পার্লামেন্টের সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত শুনানিতে এ কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিওচিত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশটিতে সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করছে না ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির একটি প্রতিনিধিদল শুনানিতে প্রতিবেদন তুলে ধরে। ১৬ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির এমপি ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রেদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। তাদের সফরের লক্ষ্য ছিল, রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা।
সফর শেষে ফিরে যাওয়া এই ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যরা শুনানিতে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই নিজের অবস্থানে অনড়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা পার্লামেন্টের সদস্যদের বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হবে বলে তাঁরা মনে করছেন না। আর এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তাঁরা।
এ সময় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার ব্যাপারে প্রতিনিধিদলটির সদস্য জোসেফ ওয়াইডেনজার হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দুটি দলের মারমুখী অবস্থান দেশটিকে গভীর বিপদে ফেলে দিতে পারে। যে উত্তেজনা চলছে, তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের কোনো সম্ভাবনা কেউ দেখছেন না; বরং সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, এ অরাজকতার সুযোগ নিতে পারে ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠী। তাই বলা যায়, দেশটি ভয়ানক বিপদের মধ্যে রয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ব্যাপারেও কথা বলেন তাঁরা। এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সমস্যা আরো বাড়বে বলেও মনে করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
বাংলাদেশে নির্বিচারে চলা সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেখানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একসঙ্গে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র আছে বলে মন্তব্য করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
শুনানিতে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজনীতির নামে বিএনপি-জামায়াত জোট নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। দেশটির সাধারণ মানুষ হরতাল-অবরোধ প্রত্যাখ্যান করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে বলেও দাবি করেন বাংলাদেশের ওই প্রতিনিধি।
এর আগে পার্লামেন্টের আলোচনায় একজন বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। তাই সামনের দিনগুলোতে এই বিষয়টির ওপর নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
শুনানি শেষে বলা হয়, আগামী কয়েক মাস বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ রাখবেন তাঁরা।
এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী উল্লেখ করে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়।