কে ঠিক – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি অন্য কেউ?
একদিকে হামলার শিকার প্রকাশকের পরিবার বলছে, জিডি করার পরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আর মনে করেননি বলে পুলিশ দেওয়া হয়নি।
আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, হামলার সময় সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী লালমাটিয়া ও শাহবাগের মার্কেটগুলো বন্ধ থাকায় দুর্বৃত্তরা সহজেই পালিয়ে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার এসব অঞ্চলের মার্কেট খোলা থাকে। যথারীতি এদিন প্রকাশনা সংস্থা জাগৃতি ও শুদ্ধস্বরের কার্যালয় খোলা ছিল।
তৃতীয় আরেকটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গরমিল পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের স্থল আজিজ সুপার মার্কেট ও লালমাটিয়ার কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরা ছিল না বলে জানান মন্ত্রী। তবে আজিজ সুপার মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং শাহবাগ থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) বলছেন, সিসি ক্যামেরা রয়েছে।urgentPhoto
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘এই যে লালমাটিয়ার ঘটনাটা। তিনি (শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশিদ টুটুল) ফেব্রুয়ারি মাসে জিডি করেছিলেন। এরপর তাকে পুলিশ প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছিল। তারাই বলতেছিল যে, পুলিশ যদি তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে তার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়। তা আমরা তাকে আনা-নেওয়া করতাম। তারপরে অনেক দিন হয়ে গিয়েছে, এর ফলে স্বভাবতই যা হয়, তিনিও আর মনে করেননি যে তার প্রয়োজন আছে বা কিংবা তিনিও ইনফরমেশন দেননি।’
কিন্তু প্রকাশক টুটুলের স্ত্রী শামীম রুনী অভিযোগ করেন, পরিবার ও নিজের নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে রক্ষা পাননি টুটুল। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে উনি জিডি করেছিলেন। এতদিনে একটা অ্যাকশনে আসা উচিত ছিল না ওনাদের? কোনো পুলিশ প্রোটেকশন ছিল না। আমি যখন একটা দেশে বাস করি, তখন আমি আমার ফ্যামিলির নিরাপত্তা চাই, আমার হাজব্যান্ডের নিরাপত্তা চাই। ভালোভাবে আমরা বাঁচতে চাই।’
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, জাগৃতি প্রকাশনের কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে আজিজ সুপার মার্কেটের ক্লোজডসার্কিট ক্যামেরায় ধারণ হওয়া ফুটেজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আজিজ কো-অপারেটিভ দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির জানান, এই ফুটেজ এখনো পুলিশ জব্দ না করলেও তা পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ অন্য গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু দীপনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো এফআইআর করা হয়নি, সেহেতু ঘটনাস্থল থেকে কোনো আলামত তাঁরা জব্দ করেননি।
আজিজ সুপার মার্কেটের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ইউএনবি জানায়, ভবনটির নিচতলার বিভিন্ন স্থানে মোট আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো ছিল।
আজিজ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘কেউ যদি নিচতলা দিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়বে। তবে দুর্বৃত্তরা যদি পাশের ওষুধের দোকান বা দ্বিতীয় তলা ব্যবহার করে ভবনে প্রবেশ করে, তাহলে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হবে।’
এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ও দোষীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভির ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে বলেও জানান ইফতেখার হোসেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় নিজ কার্যালয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক-ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে আরেক প্রকাশনা সংস্থা জাগৃতির মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে আজিজ সুপার মার্কেটের কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দুটি প্রকাশনী থেকেই ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়েছিল।