ফেনীতে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ফেনীর মাথিয়ারার জেলেপাড়ায় হামলার ঘটনার প্রতিবাদে জন্মাষ্টমী ফেনী জেলা শাখার উদ্যোগে আজ রোববার বিকেলে ফেনী ট্রাংক রোডে মানববন্ধন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। মানববন্ধনে বক্তারা দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে মাথিয়ারা গ্রামের জেলেপাড়ায় হামলার ঘটনায় সংখ্যালঘু পরিবারের পক্ষে জহর লাল দাস বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের না পেয়ে তাদের বাবা-ভাইসহ আটজনকে আটক করে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার পাছগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের জেলেপাড়ার রাস্তার মুখে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে গত বুধবার রাত ৮টার দিকে লক্ষ্মীপূজার বাজি ফাটানো নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন কিশোরের সঙ্গে জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে এবং আগের চাঁদা দাবির সূত্র ধরে রাত ৯টার দিকে আট-দশজন জেলেপাড়ায় হামলা চালিয়ে মারধর এবং একটি দোকান ভাঙচুর করে। হামলায় আহত এক গৃহবধূর গর্ভপাত হয়ে সন্তান মারা যায়।
জেলেপাড়ার বাসিন্দা জহর লাল দাস জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয় রাজমিস্ত্রীর সহকারী (জোগালি) ইকবাল (১৪) লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে জহর লালের কাছে চাঁদা দাবি করে। তিনি বিষয়টি দুষ্টামি হিসেবে উড়িয়ে দেন। কিন্তু বুধবার রাত ৮টার দিকে ইকবাল, জনিসহ তিনজন তাঁর (জহর লাল) ঘরে গিয়ে গালমন্দ করে এবং ইকবাল তার অন্য সহযোগীদের মোবাইল ফোন করে জেলেপাড়ার নিয়ে আসে। এ অবস্থায় জহর লাল তাঁদের সম্প্রদায়ের নেতা শিবু ও শংকরকে মোবাইলে সংবাদ দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। এ অবস্থায় ইকবাল ও সহযোগীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর ইকবাল তার সহযোগীদের নিয়ে জেলেপাড়ার মুখের স্বপনের দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা জহর লাল, তাঁর স্ত্রী শোভারানী দাসকে মারধর করে গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর রবীন্দ্র নাথ দাসকে মারধর করতে থাকলে তাঁর স্ত্রী তুলসী রানী দাস স্বামীকে রক্ষা করতে চাইলে হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি লাথিতে তিনিও আহত হন। রাতেই অন্তঃসত্ত্বা তুলসী রানী পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাত ঘটে।
জহর লাল দাস অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে কয়েক শ বার ফোন করলেও তিনি আসেননি বা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম জানান, লক্ষ্মীপূজার পরের দিন বুধবার রাত ৮টার দিকে জেলেপাড়ার কয়েকজন পাশের মসজিদের পাশে বাজি ফাটাতে থাকে। এ সময় ইকবাল এসে নামাজের সময় বাজি ফাটাতে নিষেধ করে। এতে স্বপন ক্ষিপ্ত হয়ে ইকবালের ওপর চড়াও হন। এ ঘটনার জের ধরে জেলেপাড়ার লোকজনের সঙ্গে ইকবাল ও তাঁর সহযোগীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ইউপি চেয়ারম্যান মানিক জানান, চাঁদা দাবির ঘটনা, মসজিদের পাশে বাজি ফাটানোর ঘটনা সঠিক। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জড়িত নয়। গোলযোগের খবর পেয়ে তিনি ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে আসা পুলিশের দারোগার সঙ্গে তাঁর কথা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে পুলিশ তাঁকে নিশ্চিত করেন।
ফেনী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সারওয়ার জাহান ও গাইনি বিভাগের চিকিৎসক রোকশানা বেগম জানান, তুলশী দাস ও গর্ভপাত হওয়া মৃত শিশুকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আনা হয়। তুলশীকে চিকিৎসা দিয়ে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। বর্তমানে তাঁর অবস্থা ভালো আছে।
এদিকে এ ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপশ কুমার পাল ফেনী এসেছেন। আগামীকাল সোমবার বিকেলে তিনি মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন।
এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজ আহম্মদ চৌধুরী ও ফেনী-২ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবদীন ভিপি জয়নাল জেলেপাড়ায় গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন।