যুদ্ধ সবে শুরু
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/11/24/photo-1448307359.jpg)
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়েই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি, বরং তা সবে শুরু হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জামালখান চেরাগী পাহাড় এলাকায় সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে এ মন্তব্য করেন বক্তারা।
একের পর এক বিজ্ঞানমনস্ক লেখক-প্রকাশক, ব্লগার, সংস্কৃতিকর্মী, যাজক হত্যা এবং প্যারিস ও বামাকোতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির ডাক দেন পাঁচ বিশিষ্টজন। তাঁদের মধ্যে আছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, শহীদজায়া মুশতারি শফি, অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রণজিৎ দে। তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমবেত হন বন্দরনগরীর সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিকরা।
সমাবেশে ড. অনুপম সেন বলেন, স্বাধীনতার যে চেতনা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে সেই চেতনা আবার উজ্জীবিত হয়েছে। যারা স্বাধীনতার মূল চেতনায় আঘাত করেছিল, তাদের অনেকে এখনো আছেন। তাদের শেষ করা যায়নি। এ জন্য কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। যুদ্ধ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
‘এই যুদ্ধে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ, যাঁরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, তাঁদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সবাইকে এক হয়ে দাঁড়াতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। প্রতিক্রিয়ার শক্তিকে ছোট ভাবলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
খালি দেশের উন্নয়ন করলে হবে না উল্লেখ করে বিশিষ্ট এ সমাজবিজ্ঞানী বলেন, এত উন্নয়নের পরও প্রতিক্রিয়ার শক্তি কীভাবে জয়ী হচ্ছে? এ জন্য গ্রামগঞ্জে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে, প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, কিন্তু আমরা এখনো উত্তরণের দিকে যেতে পারিনি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধর্মান্ধগোষ্ঠী দখল নিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তি বিভক্ত ও ক্ষুদ্র চিন্তা থেকে বেরোতে পারছে না।
সামনে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে উল্লেখ করে আবুল মোমেন আরো বলেন, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে তরুণদের তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করতে হবে। বৃহত্তর বিস্তৃত নাগরিক ঐক্য গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে। সরকার ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
শহীদজায়া মুশতারি শফি বলেন, ‘আমরা মাত্র সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিলাম। পাকিস্তানিদের হটিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। এখন সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ। আমরা অবশ্যই রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব।’
অধ্যাপক রণজিৎ দে বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচ্ছে। তাদের অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে।
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, সাম্রাজ্যবাদ আর জঙ্গিবাদ পরস্পরের সহোদর ভাই। এ দুটোকেই টার্গেট করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।
আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফী, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রামের সভাপতি তপন দত্ত, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল বৈষ্ণব, জেলা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের সভাপতি ফজল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. চন্দন দাশ ও সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা তপন দস্তিদার ও উদয়ন নাগ, গণসংগীতশিল্পী রবিন দে, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অনুপ সাহা, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহসভাপতি সুনীল ধর ও সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত, কবি আশীষ সেন, শিক্ষিকা সালমা জাহান মিলি, উদীচীর যুগ্ম সম্পাদক জয় সেন, সংস্কৃতিকর্মী শিমুল সেন, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপ সাহা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে উদীচী ও রক্তকরবীর শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। সমাবেশ শেষে মশাল মিছিল চেরাগী মোড় থেকে আন্দরকিল্লা, লালদীঘি হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।