নিখোঁজ পৌর মেয়রের লাশ মিলল আজিমপুর কবরস্থানে
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/03/03/photo-1425392635.jpg)
রাজশাহী পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল গফুরকে হত্যার পর ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। লাশ দাফনের দুই মাস পর পবা থানা পুলিশের একটি দল আজ মঙ্গলবার বিকেলে কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সময় পুলিশের হাতে আটক মেয়রের কথিত প্রেমিকা জান্নাতুন সালমা মিমও উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, আজিমপুর কবরস্থানে রেজিস্ট্রি খাতায় মেয়র গফুরের মৃত্যু ৩ জানুয়ারি ও দাফন ৬ জানুয়ারি উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতুন সালমা মিম মেয়র আবদুল গফুরকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন।
আজিমপুর কবরস্থান এলাকার ইমাম হাফিজুল ইসলাম পুলিশকে জানান, মিম তাঁদের বলেছিলেন তাঁর ভাই আবদুল গফুর ৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। দাফনের আগ পর্যন্ত লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাল মর্গে রাখা ছিল। এ ব্যাপারে হাসপাতালের একটি মৃত্যু সনদও দেখান তিনি। পরে ৬ জানুয়ারি আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
ওই মৃত্যু সনদ পুলিশকে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন মিম। পুলিশের ধারণা, মেয়র গফুরকে হত্যার পর হাসপাতালের ভুয়া মৃত্যু সনদ দেখিয়ে কৌশলে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে লাশ দাফন করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে কাল বুধবার মেয়রের লাশ নিয়ে পুলিশ রাজশাহী ফিরবে বলে জানিয়েছে।
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান জানান, জান্নাতুন সালমা মিমের বাবার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। তাঁর বিয়ে হয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের সঙ্গে।হারুন ঢাকায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি করেন। কয়েক বছর আগে তিনি নওহাটায় সায়াগ্রাম নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। ওই এনজিওর নামে একটি ক্লিনিক খুলে নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক দাবি করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন হারুন ও মিম। দুই বছর আগে ওই এনজিও এবং ক্লিনিকটি তারা গুটিয়ে নেন। এরপর নওগাঁ গিয়ে ‘সালমা ক্লিনিক’ নামে একটি ক্লিনিক খোলেন তাঁরা। মিম ও তাঁর বোন জান্নাতুন নাইম ওই ক্লিনিক দেখাশোনা করতেন।
ওসি জানান, জান্নাতুন সালমা মিম নওহাটায় ক্লিনিক পরিচালনার সময় নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে নওহাটা পৌর মেয়র আবদুল গফুরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
নওহাটা পৌর মেয়র আবদুল গফুরের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা পারুল জানান, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন মেয়র। গত ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিল। এরপর থেকে আবদুল গফুর নিখোঁজ হন।
পবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬ জানুয়ারি থেকে বন্ধ থাকার পর ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি মেয়রের দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে তাঁর ছেলের মোবাইলে দুটি এসএমএস আসে। ওই দুটি এসএমএসের একটিতে ২৫ হাজার টাকা এবং অন্যটিতে ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলা হয়। দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিছিন্ন থাকার পর এসএমএস করে বিকাশে টাকা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে ১৯ জানুয়ারি মেয়রের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা পবা থানায় অপহরণ মামলা করেন। তখন পুলিশ তদন্তে নামে।
আবুল কালাম আজাদ জানান, মুঠোফোন ট্র্যাক করে মেয়রের ফোন নাম্বারের অবস্থান ৭ জানুয়ারি নওগাঁ এবং তারপর থেকে ঢাকায় পাওয়া যায়। মুঠোফোনের সূত্র ধরে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার সংসদ ভবন এলাকা থেকে মিমকে আটক করা হয়। আটকের পর মিম নিজেকে মেয়রের স্ত্রী বলে দাবি করেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি মিমের দুই বোন জান্নাতুন নাইম ও জান্নাতুন ফেরদৌসকে নওগাঁ ও ঢাকা থেকে আটক করে পুলিশ। প্রথম দফায় চার দিনের রিমান্ড শেষে গত ১ মার্চ স্বীকারোক্তি দিতে চেয়েও মিম আদালতে মেয়র গফুরকে হত্যা করার স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হননি। ফলে ওই দিন তাঁকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁকে নিয়ে পবা থানা পুলিশ ঢাকায় যায়। দুপুরে আজিমপুর কবরস্থানে মিমকে নিয়ে উপস্থিত হলে সেখানকার কেয়ারটেকার মেয়র গফুরকে দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।