প্রসবের অস্ত্রোপচারে ‘চক্ষু বিশেষজ্ঞ’, মা-শিশুর মৃত্যু
চক্ষু বিশেষজ্ঞ দাবি করা এক চিকিৎসকের অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান) সময় মা ও নবজাতক দুজনই মারা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর শহরের একটি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই চিকিৎসকের নাম এম এ দাউদ। ক্লিনিকের দেয়ালে লেখা ‘এম এ দাউদ, এমবিবিএস, বিসিএস (হেলথ), চক্ষু বিশেষজ্ঞ, পিজিটি (জেঃ সার্জন)। সিনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জন।’ ঘটনার পর তিনি পালিয়ে গেছেন।
নিহত ওই প্রসূতির নাম ময়না বেগম (৩০)।তিনি ডামুড্যা উপজেলার চরমাল গাঁও ভাদুরি কান্দির জসিম ভূইয়ার স্ত্রী।
নিহত ময়নার পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকালেই ময়না বেগমকে সন্তান প্রসব করানোর জন্য শরীয়তপুর নার্সিং হোম নামের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুপুর ২টার দিকে ওই প্রসূতিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে (অপারেশন থিয়েটার) নেওয়া হয়। এর পর ভেতর থেকে ময়নার চিৎকার শোনা যেতে থাকে। কিছুক্ষণ পর চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। স্বজনরা বিকেল ৩টার দিকে জানতে পারে ময়না বেগম মারা গেছেন। ময়নার কেন মৃত্যু হলো জানতে চাইলে ক্লিনিকের কর্মীরা স্বজনদের মারধর করে। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এর আগেই চিকিৎসক এম এ দাউদ ও ক্লিনিকের কর্মীরা পালিয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ স্বজনরা ক্লিনিক ভাঙচুর করে। বর্তমানে ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে।
নিহত ময়না বেগমের বাবা হাসেম রাঢ়ি বলেন, ‘আমার মেয়েকে আপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর সে খুব চিৎকার করতে থাকে। আমরা খোঁজ নিতে গেলে আমাদের অন্য কক্ষে আটকে রাখা হয়।
বিকেল ৩টার দিকে জানতে পারি, আমার মেয়ে মারা গেছে। কীভাবে মারা গেছে জানতে চাইলে তারা আমাদের মারধর করে। ওই চিকিৎসক চোখের বিশেষজ্ঞ না, তা আমরা আগে জানতাম না। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
ঘটনার সময় ক্লিনিকে উপস্থিত ছিলেন ময়না বেগমের ননদ ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘ময়নার অস্ত্রোপচার করেছেন এক বৃদ্ধ চিকিৎসক। তাঁকে অবেদন করা (অ্যানাসথেসিয়া) হয়নি। সিজারিয়ানের সময় সে অনেক চিৎকার করেছে। কিছুক্ষণ পর জানতে পারি সে ও তার বাচ্চা মারা গেছে।’
ঘট্নার পর বিকেল ৫টার দিকে ক্লিনিকে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। অপারেশন থিয়েটারের মেঝেতে ওই প্রসূতির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পাশের কক্ষে ছিল নবজাতকের মরদেহ।
শরীয়তপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, অবহেলায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।