‘আলু লাগানো নেশা হইয়া গেছে’
মুন্সীগঞ্জে আলু উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। এবার এ অঞ্চলে ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৩৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে তাদের অভিযোগ, সার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে যেমন আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়বে কৃষকরা, তেমনি উৎপাদন খরচ বাড়ার আশঙ্কাও আছে।
অবশ্য কৃষি অধিদপ্তরের দাবি, সারের দাম বৃদ্ধি পায়নি। কেউ বেশি রাখলে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।
সদর উপজেলার বড় কেওয়ার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু চাষে। এঁদের অনেকেই গত বছর আলু আবাদ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু ‘স্বভাবমতো’ এবারও লাভের আশায় নেমে পড়েছেন মাঠে।
বড় কেওয়ার এলাকার আলুচাষি রহিম মিয়া বলেন, ‘ভয় কাজ করে, দাম পামু তো! এখন আলু লাগানো নেশা হইয়া গেছে। তারপরও লাভের আশা করে আলু লাগাই। দেখেন, সার প্রতি বস্তায় নিধারিত দামের চাইতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দিয়া কিনতে হচ্ছে।’
একই অভিযোগ করেন এলাকার কৃষক ছাত্তার দেওয়ান। তিনি বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন উপকরণ ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও তুলনামূলকভাবে ফসলের দাম বাড়ে না। ফলে কৃষকদের সবসময় থাকতে হয় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়।
জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপার এলাকার আবুল বাশার বলেন, ‘সারের দাম বেশি। আলু চাড়া আর কি লাগামু। যদি লস খাই তারপরও লাগাই লাভের আশায়।’
বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলার সমিতির জেলা সভাপতি হাজি মো. নোয়াব আলী বলেন, পুরো জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই। ডিলাররা দাম বেশি রাখে না। তবে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি বস্তায় ২০/৩০ টাকা বেশি রাখে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, সারের দাম কেউ বেশি রাখছে তা জানা নেই। প্রতিবারের মতো এবারও আলু আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে সারের দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখছে তা জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বছর জেলার ৩৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হচ্ছে। দেশের শতকরা ১৯ ভাগ আলু মুন্সীগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। গত বছর জেলায় মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল।
কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, জেলার দুটি উপজেলায় নিচু জমিতে বন্যার পানি জমেছিল। সেটি দেরিতে নেমেছে। কিন্তু আলু উৎপাদনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।