ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুমুক্ত হওয়ার দিন আজ
আজ ৮ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কোনোরকম আক্রমণ ছাড়াই শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। নয় মাস যুদ্ধ শেষে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক অফিসসংলগ্ন চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার এক সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করেন মুক্তিযুদ্ধে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান জহুর আহমেদ চৌধুরী।
২ ডিসেম্বর থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনের সিংগারবিল, সালদা নদী, কসবা, আখাউড়ার মুকুন্দপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। জহুর আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বেই চলে এ অঞ্চলের যুদ্ধ।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুনুর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া মুক্ত করে একই দিন মুক্তিবাহিনীর একটি অংশ দক্ষিণ দিক থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এবং মিত্রবাহিনীর ৫৭তম মাউন্টেন ডিভিশন আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শহরের চতুর্দিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শক্ত অবস্থান থাকায় পাকিস্তানি বাহিনীরা পালিয়ে যায়।
তবে পাকিস্তানিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে এম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটক থাকা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের পুনিয়াউট রেলগেট, দক্ষিণ পৈরতলায় রেললাইনসংলগ্ন এবং কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ছাড়া শহর ছেড়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা কলেজ হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার, গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াহেদ খান লাবলু ক্ষোভ প্রকাশ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও জেলার বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি যেমন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, তেমনি যেসব স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে সেগুলোরও রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড. মোশাররফ হোসেন জানান, আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এই জেলার অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে।