আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন : প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিছি খেলতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করতে মুন্সীগঞ্জের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার জেলার মাওয়া চৌরাস্তায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, সেটা হলো জনগণের সেবা করা। আর বিএনপির কাজ জামায়াতকে সাথে নিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা। এরা মানুষকে কষ্ট দিতে পারে, কল্যাণ তারা করে না, করতে চায় না। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তারা।’
বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণকাজ আজকে আমরা শুরু করলাম। এটি ছিল এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করেছেন। আমরা সরকার গঠন করেছি। গঠনের পর থেকে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করি। একটা পর্যায়ে আমাদের ওপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে অর্থ প্রত্যাহার করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। আমি দুর্নীতি করতে আসি নাই। জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। আমাকে প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু তারা প্রমাণ দিতে পারে নাই।’
“আমরা আমাদের নিজের টাকায় এই বৃহৎ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী একটি জাতি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই জাতিকে কেউ দাবায় রাখতে পারবা না।’ কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই। আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে চাই”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, লাখো শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার করব। আল্লাহর রহমতে তা আমরা শুরু করেছি।’
‘বিএনপি নেত্রী পদ্মা বন্ধ করেছিল’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী পদ্মা বন্ধ করেছিল। শুধু সেতু কেন, বাংলার উন্নয়নে যত কাজ আমরা শুরু করেছিলাম সবই তিনি বন্ধ করেছিলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। আজকে যখন তারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে তখন আমি তাদের প্রশ্ন করি, জিয়াউর রহমান কীভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল? ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল বলে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। তাদের কাছে শুনতে হয় নির্বাচনের ভালো-মন্দ নিয়ে।’
‘তারা ধ্বংস করতে জানে। মানুষের মঙ্গল করতে জানে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। যারা ধর্মের নাম দিয়ে রাজনীতি করে, তারা মসজিদে নামাজ পড়ার সময় কৃষক লীগের নেতাকে হত্যা করেছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানুষ পুড়িয়েছে
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘৯৩ দিন খালেদা জিয়া থাকলেন কোথায়? তাঁর অফিসে। আওয়ায়ী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত না করে নাকি ঘরে ফিরবেন না। অন্যদিকে তাঁর হুকুমে তাঁর ক্যাডাররা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ১৫৭ জন মানুষকে পুড়িয়েই মেরে ফেলেছে। যারা বেঁচে আছে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা হযেছে। তাদের নেতাকর্মীরা যদি মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে তাহলে কি তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না? তাঁদের কি ফুলের মালা গলায় দিয়ে পুজো করতে হবে? খালেদা জিয়া কি তাই চায়? এই প্রতিটি হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে হবে। বাংলার মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’
কর্মসংস্থান বাড়ছে
বক্তব্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, ইন্টারনেট, দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা, খাদ্যনিরাপত্তা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি, বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, রাস্তা-ঘাট, সেতুসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই এ দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, কেউ গৃহহারা থাকবে না। সবাই স্কুলে যাবে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি, যারা বিদেশে যাচ্ছে তাদের ট্রেনিং দিয়ে দিচ্ছি, দেশের ডিজিটাল সেন্টারে, কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশন, ব্যাংক-বিমা দিয়েছি, মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য যেমন কাজ করেছি তেমনি সরকারি কর্মচারীদেরও বেতন বাড়িয়েছি।’
বিএনপি-জামায়াত কল্যাণ চায় না
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাই চায় নাই, তারা মানুষের উন্নতি কীভাবে চাইবে? যারা মানুষের কল্যাণ চায় না, তারা ষড়যন্ত্র করতেই থাকবে, ধ্বংস করতেই থাকবে। এদের বিরুদ্ধে আপনাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে এ দেশকে আমরা রক্ষা করবই করব। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করাই আমাদের লক্ষ্য।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কারণে যারা জমি হারিয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের কাজ চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের ছেলেমেয়েদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। এই অঞ্চলকে উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি আমরা।’ ওই সময় সরকারকে সহযোগিতা করায় স্থানীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কোনো দাবি করতে হয় না। আমরা জানি কোথায়, কী করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য যা যা করণীয় সরকার তা করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নতি হয়। কারণ দেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ ভালোবাসে।’