কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় লড়াই নৌকা-ধানের শীষে
কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা চাইছেন মেয়র পদটি ধরে রাখতে, বিএনপি সমর্থকরা চাইছে পৌরসভায় বিজয়ী হতে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসস্থান হওয়ার কারণে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা ‘ভিআইপি পৌরসভা’ হিসেবে পরিচিত। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেণীর কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সব ভোটারের মনোযোগ এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর দিকে।
১৯৯১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা দুবার করে বিজয়ী হন। পৌরসভায় মোট ভোটারসংখ্যা ৬১ হাজার ৩১০ জন।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুই দলের প্রচারের গতি। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে পারভেজ মিয়া ও বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে মাজহারুল ইসলাম ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঘরে বসে নেই প্রার্থীদের স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়স্বজনরাও।
দীর্ঘদিন পর নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের সম্মানের লড়াইয়ে জয় নিশ্চিত করতে উভয় কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মনজয়ে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারপত্র বিলির পাশাপাশি চলছে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা। প্রার্থীদের উপস্থিতিতে প্রতিদিনিই হচ্ছে একাধিক পথসভা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করায় ধানের শীষের ভবিষ্যৎ নিয়ে একধরনের শঙ্কা আর অনিশ্চয়তায় ছিলেন নেতাকর্মীরা। এবার দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে দল অংশ নেওয়ায় নেতাকর্মীদের আবেগ যেন আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তাঁর দলবল নিয়ে প্রচারে নেমে পড়ায় আশার পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে কর্মী-সমর্থকদের মনে।
গত পৌরসভা নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামকে প্রায় তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া কাঞ্চন মেয়র নির্বাচিত হন। সে নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী দুবারের পৌর মেয়র আবু তাহের মিয়া ছয় হাজার ভোট পান। এবার কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা।
সম্প্রতি জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যক্ষ জালাল আহমেদ বলেন, বিভিন্ন কারণে গত ২০ বছরে দলের নেতাকর্মীরা কখনো এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়নি। কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি বিগত মেয়রের আমলে সড়কের বেহাল অবস্থা ও জলাবদ্ধতাসহ চরম উন্নয়ন ব্যর্থতার কারণেও জনগণের রায় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী দলের কর্মী সমর্থকরা।
অপরদিকে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পুরোদমে গণসংযোগে নেমে পড়েন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া শিক্ষক পারভেজ মিয়া। যদিও বহু আগে থেকেই তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে কাজ করে আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে থাকায় এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে তরুণ রাজনীতিক পারভেজ মিয়ার পক্ষে নির্বাচনে লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা কঠিন হবে না বলে মনে করছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। এ ছাড়া লেক সিটি, সেতু, রাস্তা, মেডিকেল কলেজসহ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও পছন্দের মানুষ হিসেবে প্রতিপক্ষ বিএনপির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট টানার সম্ভাবনার কারণে পারভেজের পক্ষে নির্বাচনে জয়ী হতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কর্মী-সমর্থকরা।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল বলেন, বিজয় নিশ্চিত করতে দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সবাই মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।
নির্বাচনে বিজয়ী হতে দুই মেয়র পদপ্রার্থী ভোটারদের কাছে দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।
পারভেজ মিয়া বলছেন নির্বাচিত হলে কিশোরগঞ্জ পৌরসভাকে সমস্যামুক্ত ডিজিটাল নগরে পরিণত করার কথা।
অপরদিকে, বিএনপি মনোনীত মাজহারুল ইসলাম বলছেন, নির্বাচিত হলে রাস্তার বেহাল অবস্থা ও জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন করে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
সিপিবির আবুল হাশেম অনেকটা নীরবে গণসংযোগ চালিয়ে গেলেও তাঁর জয়লাভের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন ভোটাররা।
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আবেদ হোসেন।