বাবার কোলে করে এলো ধর্ষণ মামলার আসামি!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/01/10/photo-1452443446.jpg)
বাবার কোলে চড়ে আদালতে এসেছিল ‘সাত বছরের’ শিশু সজিব। উদ্দেশ্য জামিন পাওয়া। শিশু সজিব ধর্ষণ মামলার আসামি। আজ রোববার ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচার আহসান মো. হাবিব জামিন দিয়েছেন সজিবকে।
গত বছর ২৫ এপ্রিল দায়ের করা এক ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় সজিবকে। গত বছরের ৩০ জুন সজিবকে মামলার আসামি করে আদালতে দোষীপত্র (শিশুদের ক্ষেত্রে অভিযোগপত্রের স্থলে) দেয় পুলিশ। সেখানে সজিবের বয়স লেখা হয় ১০ বছর।
শিশু সজিব জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে। আবদুল মালেক দাবি করেছেন, সজিব স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং তাঁর বয়স সাত।
আদালত ২৪ জানুয়ারি জন্ম নিবন্ধন সনদসহ শিশুটিকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রায় ছয় মাস লুকিয়ে থাকার পর গত ২১ ডিসেম্বর সজিব মামলা থেকে জামিন নিতে আদালতে আসে। ওই দিন আইনি জটিলতায় জামিন হয়নি তার।
এ ব্যাপারে শিশু সজিবের আইনজীবী তবিবউর রহমান বলেন, ‘আজ ১০ জানুয়ারি আবার সজিব আদালতে হাজির হয় এবং বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় আগামী ধার্য তারিখে জন্ম নিবন্ধন সনদসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।’ তিনি আরো বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকার বেলবন্ডসহ স্থানীয় একজন জামিনদারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে সজিবকে।’
বাবার কোলে চড়ে আদালতে হাজির হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছিল ব্যাপক কৌতূহল। এ সময় শত শত মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে শিশুটিকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল বিকেলে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। এ মামলার প্রধান আসামি একই গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র আবু ইউসুফ (১৪)। ধর্ষিতাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনার অপরাধে শিশু সজিবকে মামলার আসামি করে দোষীপত্র দাখিল করেন কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) ইউনুচ আলী।
এ মামলার বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল বিকেলে উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামে ১০ বছর বয়সের এক কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় ওই শিশুকে উদ্ধার করে ঘটনার দিনই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে একই গ্রামের আজগর আলীর ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র আবু ইউসুফের (১৪) বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সজিবকে (১০) প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী করেন মামলার বাদী। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গ্রহণ করা হয়।
ওসি আনোয়ার জানান, মামলার তদন্ত করেন কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) ইউনুচ আলী। তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। গত ৩০ জুন আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তিনি । এতে ধর্ষকের সহযোগিতার দায়ে আসামি হিসেবে সজিবের (১০) নাম যোগ করে দুজনের নাম দাখিল করা হয়। আর এতেই সজিব সাক্ষীর বদলে হয়ে যায় আসামি।
আদালতের একটি সূত্রে জানা যায়, দাখিল করা অভিযোগপত্রে মামলাটি বিচারের জন্য কিশোর আদালতে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ।
এ ব্যাপারে ইউনুচ আলী বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি আবু ইউসুফ চৌগাছার একটি কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। ঘটনার দিন আসামি সজিব ওই মেয়ে শিশুটিকে আম খাওয়ানোর কথা বলে প্রধান আসামি ইউসুফের বাড়িতে ডেকে আনে। এরপর ঘরের ভেতরে ধাক্কা দিয়ে শিশুটিকে ফেলে দেয় এবং বউ বউ খেলার জন্য ইউসুফকে বলে।’
সজিব সেখানে পাহারা দিয়েছে এবং জানালা দিয়ে সবকিছু দেখেছে বলে ধর্ষণের শিকার শিশুটির জবানবন্দিতে উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন ইউনুচ আলী। তিনি বলেন, ২২ ধারা মতে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল ধর্ষণের শিকার শিশুর দেওয়া জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে । সেই মোতাবেক ধর্ষকের সহযোগী হিসেবে সজিবকে আসামি করা হয়েছে। ঝিনাইদহের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক শাহরিয়ার পারভেজ ধর্ষণের শিকার শিশুর জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানান ইউনুচ আলী।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, সজিব গত ২১ ডিসেম্বর আত্মসর্মপণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালতে তা গ্রহণ করেননি। যে কারণে ওই দিন সজিবের জামিন হয়নি। তবে তাকে জেলহাজতেও নেওয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে মামলাটির বিচার শুরু হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১-এর আদালতে।’