ঋণের জামিনদার না হওয়ায় প্রতিবেশীর ছেলেকে হত্যা
গাজীপুরে ঋণের টাকার জামিনদার না হওয়ায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেনের চার বছরের ছেলে সোলায়মানকে হত্যা করেছে প্রতিবেশী এক সেলুন মালিক। এ ঘটনায় র্যাব-১-এর সদস্যরা সেলুন মালিক নির্মলকে (৪০) আটক করেছেন। নির্মল এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে র্যাব।
নিহত সোলায়মানের বাবা মোকাররম হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা-চৌরাস্তার আউটপাড়া এলাকার পরিবহন নেতা আবদুল মোতালেবের বাড়িতে ভাড়া থাকেন মোকাররম ও নির্মল। নির্মল স্থানীয় কলেজপাড়া এলাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে সেলুনের ব্যবসা করে। এর পাশের একটি দোকানে ভাঙাড়ি মালামালের ব্যবসা করেন মোকাররম।
সপ্তাহখানেক আগে নির্মল স্থানীয় মার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ তোলার আবেদন করে। আর ওই ঋণপত্রে মোকাররমকে জামিনদার হতে অনুরোধ জানায় নির্মল।
নির্মলের ঋণপত্রে মোকাররম প্রথমে জামিনদার হিসেবে স্বাক্ষরও করে। কিন্তু পরে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তদন্ত করতে এসে জানান, নির্মল ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ওই টাকা মোকাররমকেই শোধ করতে হবে। এতে মোকাররম ওই ঋণপত্রে জামিনদার হতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এ নিয়ে নির্মলের সঙ্গে মোকাররমের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যে গত শনিবার বিকেলে মোকাররমের একমাত্র ছেলে সোলায়মান নির্মলের দোকানের সামনেই খেলা করছিল। একপর্যায়ে সোলায়মান নিখোঁজ হয়। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে শিশুটির খোঁজ করেও সন্ধান পায়নি।
পরে শনিবার মধ্যরাতে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি সোলায়মানকে ফিরে পেতে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মোকাররমের মোবাইলে ফোন করে। ফোনে তারা রোববার সন্ধ্যায় টঙ্গীতে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে হাজির হতে বলে। পরদিন রোববার সকালে এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় এবং ঘটনাটি র্যাবকেও জানানো হয়। কিন্তু সেদিন মুক্তিপণের টাকার আর ব্যবস্থা করতে পারেনি মোকাররম।
নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর সোমবার সন্ধ্যার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমপুর সুরাবাড়ী এলাকার একটি জঙ্গল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে, সোলায়মান নিখোঁজের পর থেকে নির্মলের সেলুন বন্ধ ছিল। আর ঘটনার কয়েক দিন আগে নির্মল তার স্ত্রী-সন্তানকেও গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এতে নির্মলের প্রতি সন্দেহ হয় মোকাররমের।
এদিকে র্যাব-১-এর কর্মকর্তা লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, গত সোমবার বিকেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মলকে আটক করা হয়। এর পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিনই নির্মল তাঁর দোকানের শাটার আটকে শিশু সোলায়মানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এর পর শিশুটির লাশ কাশিমপুরের সুরাবাড়ী এলাকার রাইস মিলের পাশের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
এদিকে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, সোমবার সন্ধ্যার দিকে এলাকাবাসী কাশিমপুর সুরাবাড়ী এলাকার একটি জঙ্গলে ওই শিশুর লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিকেলে মোকাররম বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেছেন।