‘তেলাপিয়া ক্ষতিকর নয়, পুষ্টিকর ও নিরাপদ’
তেলাপিয়া মাছ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং পুষ্টিমানের দিক থেকে অত্যন্ত উপযোগী, সুস্বাদু ও নিরাপদ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মৎস্যবিজ্ঞানী ড. এম জি হোসেন এই দাবি করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ কয়েকটি অনলাইনে তেলাপিয়া মাছ সম্পর্কে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচারের প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের একটি হোটেলে বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এম জি হোসেন এই দাবি করেন।
মৎস্যবিজ্ঞানী ড. এম জি হোসেন বলেন, সুষম প্রোটিনসমৃদ্ধ তেলাপিয়া মাছে সব ধরনের অ্যামাইনো এসিড থাকায় মানুষের শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেলাপিয়া মাছে সহনশীল মাত্রায় দুই ধরনের (ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩) ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এ ছাড়া তেলাপিয়া মাছে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ, ই, ডি, বি১, বি১২, ফলিক এডিস, এসকরভিক এসিড রয়েছে যা সেলোনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তেলাপিয়ার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম রয়েছে যা মানুষের শরীরের অস্থি গঠনে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ তথা হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও গিফট তেলাপিয়ার উদ্ভাবক এই বিজ্ঞানী আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় মাছ গ্রোপার, স্লেপার ব্ল্যাক রূপচাঁদা, টোনা, পার্চ, মাহি ইত্যাদি মাছে সহনশীন মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ মার্কারি রয়েছে। অপরদিকে তেলাপিয়ার মধ্যে সহনশীল মাত্রার চেয়েও অনেক কম মাত্রায় মার্কারি রয়েছে বিধায় তেলাপিয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
ড. এম জি হোসেন জানান, সি-ফুড ওয়াচ নামের একটি মার্কিন গ্রুপ বিশ্বব্যাপী তেলাপিয়া মাছ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফলে ফেসবুকসহ কয়েকটি অনলাইন ‘তেলাপিয়া খেলে ক্যানসার হয়’ এমন অপপ্রচার শুরু করায় বাংলাদেশে তেলাপিয়া মাছের বেচাকেনায় ব্যাপক ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম শামসুল আলম বাদল জানান, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে তেলাপিয়া মাছ পরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায়নি। পরমাণু পরীক্ষাগারেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও উপাচার্য ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা একটা ষড়যন্ত্র। যারা অপপ্রচার করছে, তারা কোথায় পেলেন যে তেলাপিয়া খেলে ক্যানসার হয়। প্রমাণ ছাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এ ধরনের অপপ্রচার খুবই দুঃখজনক ও উদ্দেশ্যমূলক।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর সোয়ারীঘাটের আড়তদার মেসার্স কবির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তাওহীদ কবির শাওন সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ মেট্রিক টন তেলাপিয়া মাছের চাহিদা ছিল। কয়েক মাসের অপপ্রচারের কারণে ৭৫ মেট্রিক টন চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। তিনি আরো জানান, তিন মাস আগেও প্রতি কেজি তেলাপিয়া পাইকারি ১১০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন ৮৫ টাকা দরেও ক্রেতা পাওয়া যায় না।
ময়মনসিংহ জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাতেন জানান, প্রতিবছর তিনি সাত-আট কোটি পোনা উৎপাদন করেন। এবার নেতিবাচক প্রভাবে পোনার চাহিদাও কমে গেছে। অপপ্রচার বন্ধ না হলে হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলেকুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, দেশে উৎপাদিত ৩৫ লাখ মেট্রিক টন মাছের মধ্যে তেলাপিয়ার উৎপাদন তিন লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। তেলাপিয়া জনপ্রিয় মাছ। এটা সহজলভ্য ও কম সময়ে উৎপাদন সম্ভব বলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পাঙ্গাশের পরই এখন তেলাপিয়ার চাহিদা ও উৎপাদন হচ্ছে। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো কারণ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক লুৎফুর রহমান সিদ্দিকী, কোষাধ্যক্ষ রীতিশ চন্দ্র পণ্ডিত, স্বর্ণলতা ফিশারিজের মালিক আবদুল কাদির তরফদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।