প্রভাবশালীদের চাপ, পুলিশ চায় টাকা
মাদারীপুরে গৃহবধূ বন্যাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তিনদিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারায় মামলা নিচ্ছে না তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পূর্বরাস্তি গ্রামের গৃহবধূ বন্যাকে (২০) অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান।
নিহত বন্যার পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্বামী ইব্রাহিম বন্যার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বন্যা মারা যান। এই ঘটনায় তারা মামলা করতে গেলে মাদারীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বন্যার মা রাহেলা বেগমের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় এসআই মামলা নেননি।
রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রভাবশালীরা মামলা করতে দিচ্ছে না। মামলা করতে গেলে কামরুল দারোগা আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। টাকা দিতে না পারায় গত তিনদিনেও পুলিশ মামলা নেয়নি। আমার স্বামী রিকশাচালক। কী করে পুলিশকে টাকা দেব? কোথায় পাব এত টাকা?’
রাহেলা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, ‘যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন বিচার চাইতে গিয়ে টাকা দিতে হবে। গরিবের জন্য কি কেউ নাই?’
বন্যার চাচি দিলপী বেগম বলেন, ‘আমাদের মেয়েকে খুন করার দিন রাতেই একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সালিশ মীমাংসার আয়োজন করে। মামলা না করার জন্য এই মহল চাপ দিচ্ছে।’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাদারীপুর সদর থানায় মামলা হয়নি।
টাকা চাওয়ার ব্যাপারে এসআই কামরুজ্জামন বলেন, ‘তারা তো এখনো অভিযোগই করেনি। মামলা হবে কীভাবে? টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সব মিথ্যা কথা।’ অভিযুক্ত ইব্রাহিমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, ‘ওই মেয়ের বাবা-মা দুজনের দুই রকম সিদ্ধান্ত। তাই তাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মামলা করতে পারেনি। টাকা চাওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মামলা নিতে টাকা চাওয়ার কথা নয়। তারা মামলা করতে চাইলে পুলিশ অবশ্যই মামলা নেবে।’