পরিবেশ রক্ষায় ২৮ দফা বান্দরবান ঘোষণা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/03/19/photo-1458408928.jpg)
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় দেওয়া হয়েছে বান্দরবান ঘোষণা ২০১৬। গত ১৭ ও ১৮ মার্চ ২০১৬ বান্দরবানে অনুষ্ঠিত পরিবেশ সাংবাদিকদের সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। গ্রিন নিউজ বিডি ডটকম ও গ্রিন সোলজারের আয়োজিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণমাধ্যমকর্মী, গবেষক, পরিবেশবিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মীরা অংশ নেন।
বান্দরবান ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশগত, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সমদৃষ্টিতে বিবেচনার মধ্য দিয়ে দেশের প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
বান্দরবান ঘোষণার ২৮ দফা
১. সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ের সব কর্মসূচির ভেতর পরিবেশবান্ধব সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. জাতীয় পরিবেশ নীতি জাতীয় জীববৈচিত্র্যের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা হালনাগাদ করতে হবে এবং তা অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাব নিরোধে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম জাতীয় মূলনীতি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশ সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
৬. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বন ও জলাভূমি রক্ষায় জরুরি সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, রক্ষিত এলাকা, অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, স্থানীয়ভাবে সংরক্ষিত, কৃষি-প্রতিবেশ, বিশেষ পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের অঞ্চল এবং বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এলাকা ব্যবস্থাপনায় জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
৮. অনতবিলম্বে পরিবেশ ধ্বংসকারী সব শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৯. জলাভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০. চট্টগ্রামে পুরোনো জাহাজ ভাঙা কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট স্থানে এবং সার্বিকভাবে পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালিত করতে হবে।
১১. পাহাড় ও চিরহরিৎ বন সংরক্ষণের জন্য পার্বত্য জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আধুনিক ও নতুন ধারায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
১২. প্রকৃতি বিরূপ পর্যটন কার্যক্রম বিশেষত পাহাড়, হাওর ও সাগরসৈকত প্রতিহত করুন ও প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন উৎসাহিত করুন।
১৩. বঙ্গোপসাগরে সাগর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে
১৪. জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণ, প্রতিকার এবং অভিযোজন প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত, স্বচ্ছ এবং সুদূরপ্রসারী হতে হবে।
১৫. ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সব অঞ্চলের প্রাকৃতিক পানির আধার সংরক্ষণ করতে হবে।
১৬. প্রকৃতি, পরিবেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ গণমাধ্যমকর্মীদের জাতীয় সংগঠন কার্যকর করতে হবে।
১৭. অপরিকল্পিত পাথর ও বালু উত্তোলন এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।
১৮. অপরিকল্পিত খনিজ উত্তোলন বন্ধ করে খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
১৯. প্রকৃতি ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণে নারীর জ্ঞান ও চর্চাকে স্বীকৃতিসহ পরিবেশ উন্নয়নে সব কার্যক্রমে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২০. আদিবাসীদের প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার জ্ঞান ও ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে সব পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচিতে আদিবাসীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২১. গতানুগতিক উন্নয়ন চিন্তা ও পরিবেশবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাকে পরিবেশবান্ধব হতে হবে।
২২. বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী চিহ্নিত আগ্রাসী প্রজাতির গাছ, মাছ ও প্রাণিসম্পদের সুস্পষ্ট তালিকা তৈরি করে এসবের উৎপাদন, রোপণ ও বিস্তার রোধ করতে হবে।
২৩. সমুদ্রের প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা যুক্ত করার মাধ্যমে সমুদ্রবিষয়ক স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
২৪. প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় সরকার ও আদিবাসীদের প্রথাগত শাসন কাঠামোকে যুক্ত করতে হবে।
২৫. অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক পর্যটনের নামে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
২৬. প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে প্রকৃতি শিখন পাঠকে যুক্ত করতে হবে।
২৭. জাতীয় শিক্ষা কর্মসূচিতে বাংলাদেশের নদী, পাহাড়, বন, চর, গড়, জলাভূমি, টিলাবন, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ সব প্রাকৃতিক ভিন্নতার অঞ্চলের বিবরণ যুক্ত করতে হবে।
২৮. প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।