সুন্দরবনে মাসব্যাপী মধু আহরণ শুরু শুক্রবার
সুন্দরবনে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মধু আহরণ মৌসুম। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রায় এক হাজার মৌয়াল (মধু আহরণকারী) নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে নৌকা ও সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে কাল সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মধু আহরণে প্রবেশ করবেন। প্রতি বছর সুন্দরবন থেকে গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার মণ মধু আহরিত হয়ে থাকে। যা পরিমাণে সারাদেশ থেকে আহরিত মধুর অর্ধেকেরও বেশি। সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন ফুলের মধুর মধ্যে খলসী ফুলের মধু হচ্ছে সর্বাধিক স্বচ্ছ ও সুস্বাদু। বিক্রি হয় অধিক দামেও। সে কারণে সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের মধ্যে সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের অরণ্যে খলসী গাছের আধিক্য থাকায় মধু আহরণকারী মৌয়ালদের লক্ষ্য থাকে ওই দুটি রেঞ্জে। এই দুটি রেঞ্জ থেকে সুন্দরবনের মধুর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আহরিত হয়ে থাকে। সুন্দরবনের মৌয়ালরা হতদরিদ্র ও অশিক্ষিত হলেও সনাতন পদ্ধতিতে পেশাগত কারণে তারা মধু আহরণ করে থাকে নিপুণ হাতে। মৌয়ালরা ছোট-বড় দেশীয় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে দলবদ্ধভাবে সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে যায়।
সুন্দরবনের বেশ কয়েকজন মৌয়ালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি গ্রুপে সাতজন থাকে। একজন রান্নসহ নৌকা পাহারা দেওয়ার জন্য থেকে যান। বাকি ছয়জন ঝুলন্ত মৌচাক খুঁজতে হাড়ি ও দাসহ মধু আহরণের অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। অনেকে দূরবীনের সাহায্যও নিয়ে থাকেন। মৌচাক খুঁজে পেলে ‘কু’ শব্দ করলে দলের অন্যরা সেখানে এসে পৌঁছান। এরপর তারা মাথায় গামছা বা কাপড় বেঁধে খড়কুটোর ‘উকো বা তড়পা’দিয়ে আগুনের ধোয়া দিয়ে মৌচাক থেকে মৌমাছিদের তাড়িয়ে দেয়। মৌমাছি সরে গেলে একজন গাছে চড়ে দা দিয়ে কেটে চাক থেকে মধু ও মোম আহরণ করে হাড়ি বা কন্টিনারে ভর্তি করে রাখে। মৌয়ালরা সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণকালে প্রতি বছর অনেক মধু মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিবছর মধু আহরণের সময় অনেক মৌয়াল সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হামলায় নিহত হয়ে থাকে।